লোকসভায় বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (rahul-gandhi) মঙ্গলবার (৩ জুন, ২০২৫) অভিযোগ করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোন কলের পর ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন।
ভোপালের রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে তিনি বিজেপি-আরএসএস-এর বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, এই দলের নেতারা সামান্য চাপের মুখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, “বিজেপি-আরএসএস-এর লোকদের উপর একটু চাপ দিলেই তারা ভয় পেয়ে পালায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখান থেকে ফোন করে বললেন—নরেন্দ্র, আত্মসমর্পণ করো। এখানে নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের ইশারায় বললেন, ‘ইয়েস স্যার’।”
ইন্দিরা গান্ধীর সাহসের উদাহরণ
রাহুল গান্ধী (rahul-gandhi) ১৯৭১ সালের সংকটের সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেভেন্থ ফ্লিট এগিয়ে এসেছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধী(rahul-gandhi) দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, “আমি যা করা দরকার তা করব।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি-আরএসএস-এর লোকদের চরিত্র এমনই। স্বাধীনতার সময় থেকে তাদের আত্মসমর্পণের চিঠি লেখার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি আত্মসমর্পণ করে না। গান্ধীজি, নেহরুজি, সর্দার প্যাটেলজি—এরা আত্মসমর্পণকারী নন, বরং মহাশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষ।”
অপারেশন সিন্দুর ও যুদ্ধবিরতি
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন। এর জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করে, যার অধীনে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়। এই অপারেশনে জয়শে-মোহাম্মদের নেতা আবদুল রউফ আজহার সহ ১০০-এর বেশি জঙ্গি নিহত হয়।
পাকিস্তান এর জবাবে ১০ মে ভোরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় সীমান্ত শহরগুলিতে হামলা চালায়। ভারত এর পাল্টা জবাবে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির নূর খান এবং চকলালা বিমানঘাঁটি ধ্বংস করে। চার দিনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উভয় দেশ ১০ মে সন্ধ্যা ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে যে এই যুদ্ধবিরতি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেলদের (ডিজিএমও) মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “অপারেশন সিঁদুর শুরু হওয়ার সময় ৭ মে থেকে ১০ মে যুদ্ধবিরতি পর্যন্ত ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
তবে এই আলোচনায় শুল্ক বা বাণিজ্যের বিষয় কখনও উঠে আসেনি।” তিনি আরও বলেন, ভারত এই ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার বিরোধী। পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, যা ভারত গ্রহণ করে।
যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন
লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান সীমান্তে গোলাবর্ষণ এবং ড্রোন অনুপ্রবেশের মাধ্যমে চুক্তি লঙ্ঘন করে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি স্বল্পস্থায়ী ছিল। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ তাদের অবিশ্বস্ততার প্রমাণ।” তিনি আরও জানান, ভারত এই ধরনের লঙ্ঘনের জবাবে সতর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
Tata Harrier EV: AWD-সহ টাটার প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি বাজারে এল, দাম সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি দেখুন
রাহুল গান্ধীর সমালোচনা (rahul-gandhi)
রাহুল গান্ধী (rahul-gandhi) ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবির প্রেক্ষাপটে মোদী সরকারের নীরবতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প গত ২১ দিনে ১০ বার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ভারত কি মার্কিন মধ্যস্থতা মেনে নিয়েছে? ভারত কি পাকিস্তানের সঙ্গে ‘নিরপেক্ষ স্থানে’ আলোচনায় সম্মত হয়েছে? তিনি আরও অভিযোগ করেন যে বিজেপি সরকারের এই নীরবতা ভারতের দশকের পুরনো বিদেশ নীতির স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করছে।
কংগ্রেসের অবস্থান
রাহুল গান্ধী (rahul-gandhi) বলেন, কংগ্রেস পার্টি ইতিহাসের বিভিন্ন সংকটে মহাশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “গান্ধীজি, নেহরুজি, ইন্দিরা গান্ধীজি—এঁরা কখনও আত্মসমর্পণ করেননি। বিজেপি-আরএসএস-এর মতো তারা আত্মসমর্পণের চিঠি লেখেননি।” তিনি অপারেশন সিঁদুর সময় মোদীর নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভারতের বিদেশ নীতির স্বাধীনতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের এই নীরবতা উদ্বেগজনক।
রাহুল গান্ধীর (rahul-gandhi) এই বক্তব্য অপারেশন সিঁদুর এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপটে বিজেপি সরকারের কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি এবং মোদী সরকারের নীরবতা ভারতের বিদেশ নীতির স্বাধীনতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও স্পষ্ট করেছে যে যুদ্ধবিরতি ভারত-পাকিস্তানের সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে হয়েছে, তবু পাকিস্তানের চুক্তি লঙ্ঘন এবং ট্রাম্পের দাবি ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করেছে। আগামী দিনে সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং এই ইস্যুতে ভারতের অবস্থান বিশ্ব মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ হবে।