প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মায়ানমারের সেনা প্রধান মীন আংহ্লাইংয়ের সাথে ফোনে কথা বলেছেন, এবং শুক্রবার মায়ানমারে রিখটার স্কেলে ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মায়ানমারের জনগণের প্রতি ভারতের সহানুভূতি ও সমর্থন জানিয়ে বলেন(Modi condolences Myanmar), “ভারত মায়ানমারের পাশে দাঁড়িয়ে এই কঠিন সময়ে তাদের সাহায্য করবে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “বিশ্বস্ত বন্ধু এবং প্রতিবেশী হিসেবে, ভারত মায়ানমারের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় সাহায্য হিসাবে বিপর্যয় সহায়তা উপকরণ, মানবিক সাহায্য এবং উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে।” মোদী আরও জানান, ভারত মায়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ‘অপারেশন ব্রহ্মা’ চালু করেছে, যা দ্রুতগতিতে সহায়তা পাঠানোর কাজ শুরু করেছে।
ভারতের সহায়তা:
শুক্রবার মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত মায়ানমারকে প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে উদ্ধার সামগ্রী পাঠায়। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আবহয় ঠাকুর শনিবার ইয়াঙ্গনের মুখ্যমন্ত্রী উ সোজ থেইন এর কাছে সহায়তা সামগ্রী হস্তান্তর করেন।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক পোস্টে জানিয়েছেন, ‘অপারেশন ব্রহ্মা’ শুরু হয়েছে। “প্রথম সহায়তা সামগ্রী আজ ইয়াঙ্গনের মুখ্যমন্ত্রী উ সোজ থেইন-এর কাছে রাষ্ট্রদূত আবহয় ঠাকুর হস্তান্তর করেছেন।”
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সি-১৩০ জে বিমান আজ ইয়াঙ্গনে পৌঁছে প্রায় ১৫ টন উদ্ধার সামগ্রী, যেমন-তাঁবু, কম্বল, স্লিপিং ব্যাগ, খাদ্য প্যাকেট, হাইজিন কিট, জেনারেটর এবং জরুরি ঔষধ পাঠিয়েছে।
মায়ানমারে ভূমিকম্পে প্রাণহানি:
মায়ানমারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ১,০০২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম মায়ানমার রেডিও ও টেলিভিশন সুত্রে খবর মায়ানমারের সেনা জান্তা আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা করেছে, এবং রাষ্ট্রীয় সরকারও এই বিপর্যয়ের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।
এখন পর্যন্ত ১৪টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই মায়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে একাধিক আফটারশক থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এবং চীনের ইউহান প্রদেশে পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে মায়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম এবং শহরে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।
ভারতীয় প্রতিক্রিয়া এবং মানবিক সাহায্য:
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এক টুইটে জানিয়েছেন, “অপারেশন ব্রহ্মা শুরু হয়েছে এবং ভারত থেকে প্রথম মানবিক সহায়তা ইয়াঙ্গন বিমানবন্দরে পৌঁছেছে।” এছাড়া ভারত আরও দু’টি বিমান প্রস্তুত করছে, যেগুলো আরো সহায়তা নিয়ে শিগগিরই মায়ানমারের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
নিরন্তর সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন:
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মায়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে চলমান উদ্ধার কাজের জন্য আরও সমর্থন পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল থেকেও সহায়তা আসতে শুরু করেছে। এই বিপর্যয়ের কারণে মায়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। তবে ভারত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মায়ানমারের জনগণের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং অন্যান্য ভারতীয় নেতারা ইতিমধ্যেই মায়ানমারের প্রতি ভারতের সহানুভূতি জানিয়েছেন এবং দেশটির শোকাহত জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
মায়ানমারের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, উদ্ধার কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে। ভারতীয় সরকার ‘অপারেশন ব্রহ্মা’ এর মাধ্যমে বিপর্যস্ত অঞ্চলে সহায়তা পাঠিয়ে দেশটির মানুষের জীবন পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে।