যোগীকে কোণঠাসা করতে উত্তরপ্রদেশ থেকেই সভাপতি চাইছেন মোদীরা?

বিজেপিতে এখন সভাপতি নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু। একদিকে যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের মাইন্ডগেম শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে পিছিয়ে নেই দিল্লি দরবারও। আর এবার উত্তরপ্রদেশের…

Modi and others leaders wants BJP president from Uttar Pradesh to corner Yogi, যোগীকে কোনঠাসা করতে উত্তরপ্রদেশ থেকেই সভাপতি চাইছেন মোদীরা?

বিজেপিতে এখন সভাপতি নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু। একদিকে যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের মাইন্ডগেম শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে পিছিয়ে নেই দিল্লি দরবারও। আর এবার উত্তরপ্রদেশের হেভিওয়েট নেতার দিল্লি পৌঁছে যাওয়াতে জল্পনা আরও বাড়ছে।

সেই সঙ্গে উঠে আসছে আরও একটি জল্পনা। যোগীকে চাপে রাখতেই কী মোদী-শাহরা কোনও নতুন খেলা খেলছেন? বলা হয় দিল্লির দরবার জয়ের রাস্তা উত্তর প্রদেশ হয়ে যায়। আর সেই উত্তরপ্রদেশেই অযোধ্যা আবেগে বাজিমাত করতে চেয়েছিল বিজেপি। এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বুক ঠুকে বলেছিলেন আশিটা সিট তো উত্তর প্রদেশ থেকেই আসবে। বিজেপির ৪০০ পারের ডাক বাস্তব হতে শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ থেকে ৮০ সিট আসেনি, এনডিএ জোটও ৪০০ থেকে অনেক দূরেই থেমেছে। আর এখানেই ব্যর্থতার দায় গিয়ে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথের কাঁধে।

   

এবার কী উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে যোগীর কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত কেশব প্রসাদ মৌর্যকে দাবার বোরে করছেন মোদী শাহারা? সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার সাথে উত্তরপ্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী মৌর্যের একান্ত বৈঠক ঘিরে এই জল্পনা ছড়িয়েছে। ২০২৪-এ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হয়েছেন। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবার তাঁকে সর্বভারতীয় সভাপতির পদ ছাড়তে হবে। বর্তমানে তিনি রাজ্যসভার সংসদ। তাঁর অবর্তমানে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে এখনই দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে।

চলন্ত ট্রেন-স্টেশনে ভয়ঙ্কর সব স্টান্ট, এবার করলেই চরম মাশুল, প্রস্তুত RPF

অনেকেই বলেন এখন বিজেপিতে তিনটি লবি। একদিকে গুজরাত লবি, বিজেপির এখন মুখ্যত ক্ষমতায় রয়েছে। অপরদিকে রয়েছে নাগপুর লবি এবং গোরখপুর লবি। নাগপুর এবং গোরখপুর আরএসএসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নাগপুর লবির মুখ যদি হন পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরি, গোরখপুরের গড় সামলান খোদ যোগী আদিত্যনাথ। এমত অবস্থায় গুজরাট লবি নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে মরিয়া এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। সেখানে লোকসভায় কাঙ্ক্ষিত ফল না হওয়া এবং বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রবল পরাজয়ের পর, মোদী শাহদের উপরে আরএসএসের শাসন বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিজেদের পথের কাঁটা মুক্ত করবার জন্যই উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কে সর্বভারতীয় সভাপতির পদে আনতে চাইছেন মোদীরা?

এবার স্কুল পাঠ্যে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-মহামেডনের ইতিহাস

অনেকে বলছেন এর পিছনে আরও বড় অঙ্ক রয়েছে। এমনিতেই জনমানসে একটা ধারণা রয়েছে পরের লোকসভায় বিজেপির প্রধানমন্ত্রীত্বের মুখ হয়তো হবেন বুলডোজার বাবা যোগীই। অনেকে বলেন সে ক্ষেত্রে অমিত শাহের স্বপ্নভঙ্গ হবে। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব কখনওই এই সমস্ত বিষয়ে কথা বলে না। কিন্তু রাজনীতির বাজারে যা রটে, তার কিছুটা ঘটে বলেই মনে করা হয়।

সেক্ষেত্রে আগামীর অঙ্ক হিসেব করেই কি উত্তরপ্রদেশে যোগীর কট্টরবিরোধী কেশব প্রসাদ মৌর্যকে বিজেপির সংগঠনের শীর্ষে আনার প্রচেষ্টা চলছে? অন্তত নাড্ডা মৌর্যের বৈঠকে সেই জল্পনাই জোরালো হচ্ছে। লোকসভাতে উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে বিজেপির। অখিলেশের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ৪৩ টি সিট পেয়েছে। সেখানে মোদি-যোগী জুটি ৩৬ এ থেমে গিয়েছে। আর এই বিপর্যয়ের দায়ভার এখন চাপানো হচ্ছে যোগীর ওপরে। কেশবপ্রসাদ মৌর্য যিনি বর্তমানে উপমুখ্যমন্ত্রী, বিপর্যয়ের দায় যোগী প্রশাসনের উপরেই ঠেলেছেন। তাঁর বক্তব্য যে সংগঠনে কোনও খামতি নেই। বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণেই ভোটে বিপর্যয় ঘটেছে।

এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, দিল্লি দরবার আর উত্তরপ্রদেশের মধ্যে যেন একটি ঠান্ডা লড়াই চলছে। আর মৌর্য নাড্ডা আর এই রুদ্ধ দ্বার বৈঠক যেন সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের উত্তাপকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগামীদিনের যোগীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কতটা কি হয়, তা অনেকটাই নির্ভর করবে মৌর্যের সভাপতি হওয়া না হওয়ার উপর। এরকমটাই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। তবে মোদী-যোগী সম্পর্কে নতুন কোন মোড় আসবে কিনা সেটা এখনই বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। আপাতত সংঘের রাশ বিজেপিতে কতটা কড়া হয়, তার ওপর নির্ভর করছে যোগী, অমিত শাহ এবং মোদীর পারস্পরিক সম্পর্ক। সভাপতি নির্বাচন সেই দাবা খেলার অঙ্কের একটা বড় চাল বলা যেতেই পারে।