বারাণসী, উত্তর প্রদেশ, ১০ সেপ্টেম্বর: মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী (Mauritius PM) ড. নবীনচন্দ্র রামগুলাম আজ বুধবার তাঁর স্ত্রী বীণা রামগুলামের সঙ্গে বারাণসীতে দুদিনের সফরে আসছেন। এই সফর ভারত ও মরিশাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ।
বারাণসী শহর মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। শহরের বিভিন্ন অংশে স্বাগত পোস্টার এবং আলোকসজ্জা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে, যা এই সফরের গুরুত্বকে তুলে ধরছে।
এই সফর মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান মেয়াদে ভারতের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। তিনি ৯ সেপ্টেম্বর মুম্বই দিয়ে তাঁর ভারত সফর শুরু করেছেন এবং আজ সন্ধ্যায় বারাণসী পৌঁছাবেন। ১১ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
ৎএই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, এবং বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও, রামগুলাম গঙ্গা আরতিতে অংশ নেবেন এবং ১২ সেপ্টেম্বর সকালে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পূজা দেবেন। এরপর তিনি অযোধ্যার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
বারাণসী জেলা প্রশাসনের একজন সিনিয়র আধিকারিক, বিভাগীয় কমিশনার এস. রাজালিঙ্গম জানিয়েছেন, “মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বারাণসী পৌঁছাবেন। ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং একই দিনে তিনি গঙ্গা আরতিতে অংশ নেবেন।”
তিনি আরও বলেন, শহরটি এই উচ্চ পর্যায়ের সফরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিজেপির স্থানীয় নেতা প্রদীপ অগ্রহারী জানিয়েছেন, দলের কর্মীরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা দুই নেতাকে উষ্ণ স্বাগত জানাতে উদগ্রীব। শহরের রাস্তাগুলি আলোকসজ্জা এবং পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, যা ভারত-মরিশাস সম্পর্কের গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।
এই সফর ভারত ও মরিশাসের মধ্যে ‘উন্নত কৌশলগত অংশীদারিত্ব’কে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
মরিশাস ভারতের ভারত মহাসাগর অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র প্রতিবেশী এবং ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট নীতি’ এবং ‘ভিশন মহাসাগর’ (মিউচুয়াল অ্যান্ড হোলিস্টিক অ্যাডভান্সমেন্ট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ অ্যাক্রস রিজিয়ন) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মরিশাসের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যা দুই দেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক সংযোগের প্রমাণ।
রামগুলামের এই সফরের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মার্চ মাসে মরিশাস সফর করেছিলেন, যেখানে তিনি মরিশাসের ৫৭তম জাতীয় দিবসের উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সফরে তিনি রামগুলাম এবং মরিশাসের রাষ্ট্রপতি ধরম গোখুলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। এই পারস্পরিক সফর দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতিফলন।
বারাণসীতে রামগুলামের সফরের সময়সূচিতে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গঙ্গা আরতি এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পূজা দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবেন।
এছাড়াও, অযোধ্যা সফর তাঁর ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি অংশ। এই সফরের পর তিনি দেহরাদুন, তিরুপতি এবং দিল্লি সফর করবেন। দিল্লিতে তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং রাজঘাট ও সদৈব অটল স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
এই সফর ভারত-মরিশাস সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী গত আগস্টে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতীয় জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছিলেন, “ভারত ও মরিশাসের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন আমাদের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বকে অনুপ্রাণিত করে।” প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর জবাবে মরিশাসকে ভারতের “কৌশলগত ও বিশ্বস্ত অংশীদার” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
আজ রাশিয়া থেকে ভারতে পৌঁছাবে আইএনএস তমাল, মোতায়েন হবে কারওয়ারে
বারাণসীর জনগণ এই সফরকে উৎসবের মতো উদযাপন করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই সফর শহরের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরবে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।