মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রথম সপ্তাহে সন্ত্রাসী দমন অভিযানে আটক ৩০ সন্ত্রাসী

মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন আরোপের পর প্রথম সপ্তাহেই শুরু হয়েছে ব্যাপক সন্ত্রাসী দমন অভিযান। মণিপুরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই অভিযানকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ৩০টিরও…

মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন আরোপের পর প্রথম সপ্তাহেই শুরু হয়েছে ব্যাপক সন্ত্রাসী দমন অভিযান। মণিপুরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই অভিযানকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ৩০টিরও বেশি সন্ত্রাসী, তাদের মধ্যে একটি উচ্চপদস্থ নেতা, এবং বেশ কয়েকজন গ্রামের স্বেচ্ছাসেবককে আটক করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনী বেশ কয়েকটি অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে অন্তত ১৫টি ইমপ্রভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস এবং বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল রয়েছে।

আটক সন্ত্রাসীরা মণিপুরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য, যার মধ্যে রয়েছে কংগেলিপাক কমিউনিস্ট পার্টি, পিপলস লিবারেশন আর্মি, প্রেপাক, কেএইচএল, কুকি ন্যাশনাল আর্মি বং ইউনাইটেড ন্যাশনাল কুকি আর্মি।
মণিপুরের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, একাধিক এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক এক বৃহত্তর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়। পুলিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, “আমরা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর গোপন আস্তানা চিহ্নিত করেছি এবং দ্রুত কার্যক্রম শুরু করেছি। সন্ত্রাসীরা তাদের শক্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিল, কিন্তু আমাদের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।”

   

একের পর এক সন্ত্রাসী দমন অভিযান

ফেব্রুয়ারি ১৫: নিরাপত্তা বাহিনী একটি গোপন সন্ত্রাসী আস্তানার সন্ধান পায় টেংনোপাল জেলার মধ্যে, যেখানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এই অভিযানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত হয়, কারণ নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বাস করছে যে, সন্ত্রাসীরা বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল।

ফেব্রুয়ারি ১৬: একাধিক জেলা, বিশেষ করে ইম্ফাল ইস্ট, চুরাচান্দপুর এবং কাখচিং জেলা জুড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলির বিরুদ্ধে প্রথম ধাপের অভিযানে বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

ফেব্রুয়ারি ১৭: সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ফেব্রুয়ারি ১৮: নতুন গোয়েন্দা রিপোর্টে আরও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ফলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বাড়ানো নজরদারি

রাষ্ট্রপতির শাসন শুরুর পর কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করেছে, যা সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। রাজ্যের অনেক অঞ্চলে কড়া কারফিউ আরোপ করা হয়েছে এবং রাতের সময় বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে, যাতে সন্ত্রাসীরা কোনোভাবে অস্ত্র নিয়ে চলাচল করতে না পারে।

বিক্ষোভের ঢেউ

গ্রামবাসী স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইম্ফাল এবং তার আশপাশের এলাকায় রাস্তার ওপর টায়ার পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেছে। মণিপুরের ইথনিক সহিংসতা, যা মে ২০২৩ থেকে চলমান, এতে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সহিংসতা থামাতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও জাতিগত বিভাজন এখনও চলমান।

গত ৯ ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন সিংহের পদত্যাগের পর ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির শাসন আরোপ করা হয়। সন্ত্রাসী দমন ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান আগামী দিনগুলোতে আরও জোরালো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।