রায়পুর: বহু বছরের জঙ্গি অতীত গোপন করে সাধারণ মানুষের মতো শহরে বসবাস করছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের চোখ এড়াতে পারল না। ছত্তিশগড় পুলিশের স্টেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (SIA) এক সফল অভিযানে ১৩ লক্ষ টাকার মাথার দামি এক মাওবাদী দম্পতিকে গ্রেফতার (Maoist couple arrest) করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা এই দম্পতি রাজধানী রায়পুরের চাঙ্গোরাভাট্টা এলাকা থেকে ধরা পড়ে ২৩ সেপ্টেম্বর।
গ্রেফতার হওয়া দুইজন হল জগ্গু কুরসাম ওরফে রবি ওরফে রমেশ (২৮) এবং তার স্ত্রী কমলা কুরসাম (২৭)। জগ্গুর নামে ঘোষিত পুরস্কার ₹৮ লক্ষ এবং কমলার নামে ৫ লক্ষ। বহু বছর ধরে তারা রায়পুর, ভিলাই ও দুর্গের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াবাড়ি বদলে বদলে লুকিয়ে ছিল এবং নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে নির্মাণ শ্রমিক ও দৈনিক মজুরের কাজ করছিল।
পুলিশের অভিযানে তাদের ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ — ১০ গ্রাম স্বর্ণের বিস্কুট, ₹১.১৪ লক্ষ নগদ অর্থ, দুটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন নথি। কল রেকর্ড বিশ্লেষণে জানা গেছে, এই দম্পতি সক্রিয়ভাবে জঙ্গলে থাকা শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের জন্য ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী এবং অন্যান্য সরঞ্জাম জোগাড় করত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা খুবই নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করত। এক প্রতিবেশী বলেন, “ওরা কারও সঙ্গে কথা বলত না। বাজার করতে যেত না, সকাল সকাল কাজে যেত এবং রাত করে ফিরত। তাদের বাড়িতে কাউকে আসতে যেতেও দেখা যায়নি।”
জগ্গু কুরসামের মাওবাদী জীবন শুরু হয় মাত্র ১১ বছর বয়সে। সে প্রায় দুই দশক ধরে বিজাপুরের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অংশ নিয়েছে এবং পরে ডিভিশনাল কমিটি মেম্বার (DVC) পদে উন্নীত হয়। অপরদিকে, কমলা ২০১৪ সালে মাওবাদী সংগঠনে যোগ দেয় এবং পরে এরিয়া কমিটি মেম্বার (ACM) পদে পৌঁছে যায়। তারা জঙ্গলের মধ্যেই একে অপরের প্রেমে পড়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং দাম্পত্য জীবনের পরেও সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যায়।
রায়পুর অতীতে বহুবার মাওবাদীদের জন্য “নিরাপদ শহুরে আশ্রয়স্থল” হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০০৫ সালে এখান থেকেই গ্রেফতার হয়েছিল কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য নারায়ণ সান্যাল। ২০০৮ সালে ধরা পড়েছিল সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় মহিলা নেত্রীরা। সর্বশেষ এই গ্রেফতার আবারও প্রমাণ করল, শহরে লুকিয়ে থেকে মাওবাদীরা তাদের নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কয়েক মাস ধরেই ওই দম্পতির ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছিল। অবশেষে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে পেয়ে অভিযানে নামে তদন্তকারী সংস্থা। বর্তমানে তারা রিমান্ডে রয়েছে এবং তদন্তকারীদের মতে, রায়পুরে মাওবাদীদের শহরভিত্তিক সমর্থক নেটওয়ার্কের আরও অনেক সদস্যকে শীঘ্রই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এই ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক শাখা শহরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা মাওবাদী সমর্থকদের খুঁজে বের করতে অভিযান জোরদার করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, জঙ্গলে চাপ বাড়ার কারণে মাওবাদীরা ক্রমশ শহুরে এলাকায় ঢুকে নিজেদের নেটওয়ার্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে।