পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি তিনি রাজ্যবাসীকে “একসঙ্গে লড়াই করার” আহ্বান জানিয়েছেন, যা রাজ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
এই নির্দেশ ৭ মে, ২০২৫-এ নবান্ন থেকে জারি করা হয়েছে, যার লক্ষ্য জাতীয় নিরাপত্তা সংকটে রাজ্যের প্রশাসনকে পূর্ণ সক্রিয় রাখা। এবং তিনি আরও বলেন যে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।
‘অপারেশন সিঁদুর’
৭ মে ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। এই অভিযান পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার (২২ এপ্রিল, ২০২৫) প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
পাকিস্তান এই হামলাকে “আগ্রাসন” বলে নিন্দা করে পাল্টা জবাবের হুমকি দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ, যেটি ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য হিসেবে কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে, জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ডু অর ডাই ম্যাচে টস জিতে বড় সিদ্ধান্ত রাহানের, একাদশ থেকে বাদ ২৩.৭৫ কোটির আইয়ার
প্রতিবেদন অনুযায়ী (mamata)
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবান্নে একটি জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন যে, পুলিশ, স্বাস্থ্য, পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং জরুরি পরিষেবা বিভাগের সমস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি তৎক্ষণাৎ বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, “এটি দেশের জন্য সংকটের সময়। আমাদের সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকতে হবে।”
একসঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) নবান্নের বৈঠকে বলেন, “পাকিস্তান যদি ভারতের উপর হামলা করে, আমরা চুপ করে থাকব না। বাংলার মানুষ দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবে।” তিনি রাজ্যের রাজনৈতিক দল, সমাজসেবী সংগঠন এবং সাধারণ মানুষকে এই সংকটে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তাঁর এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক মহলে “জাতীয়তাবাদী আবেগ” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন , “মমতা (mamata) জাতীয় নিরাপত্তার নামে রাজনীতি করছেন। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ তিনি এখন জাতীয়তাবাদের মুখোশ পরেছেন।” তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দেশ ও রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিজেপি এই সংকটেও রাজনীতি করছে।”
প্রশাসনিক প্রস্তুতি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছুটি বাতিলের নির্দেশের পর রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগে জরুরি প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং উত্তর ২৪ পরগনার মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগকে রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সুবিধা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে সম্ভাব্য শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, খাদ্য এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবহন বিভাগকে সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। মুখ্য সচিব বিপি গোপালিকা বলেন, “রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত।”
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারী সমিতির একাংশ বলেছে, “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য, তবে কর্মচারীদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে।” অনেকে তাদের পরিকল্পিত ছুটি বাতিল হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিকভাবে, মমতার (mamata) এই পদক্ষেপ তৃণমূলের সমর্থকদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়েছে, তবে বিরোধীরা এটিকে “নাটক” বলে সমালোচনা করেছে। সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মমতা সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata) ছুটি বাতিলের নির্দেশ এবং একসঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। তবে, এই পদক্ষেপ রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমার আগ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনকে উচ্চ সতর্কতায় থাকতে হবে। মমতার এই উদ্যোগ দেশের সংকটে রাজ্যের ভূমিকাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।