পাহাড় থেকে সাগর– বারবার কংগ্রেসকে ধাক্কা তৃণমূলের

Mamata Banerjee strategy: ত্রিপুরা, মেঘালয় থেকে শুরু করে আরব সাগরের পাড়ের গোয়া – সর্বত্রই এক অভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। রাজ্যগুলোয় বিধানসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের মোকাবিলায়…

mamata banerjee vs rahul gandhi

Mamata Banerjee strategy: ত্রিপুরা, মেঘালয় থেকে শুরু করে আরব সাগরের পাড়ের গোয়া – সর্বত্রই এক অভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। রাজ্যগুলোয় বিধানসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের মোকাবিলায় তৃণমূল কংগ্রেসের হঠাৎ প্রবেশ বারবার বিরোধী ভোটকে ভাগ করে দিয়েছে। যার লাভ তুলে নিয়েছে বিজেপি। এবার সেই একই কৌশল দেখা গেল দক্ষিণের রাজ্য কেরলে, যেখানে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর লোকসভা কেন্দ্র ওয়ানাডের অন্তর্গত একটি বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে ঘাসফুল শিবির।

কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের এই উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অংশগ্রহণ শুধুমাত্র একটি আসনের জন্য লড়াই নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বৃহত্তর রাজনৈতিক বার্তা। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর লোকসভা কেন্দ্রেই যখন তৃণমূল লড়াইয়ে নামছে, তখন তা যে কংগ্রেসকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলে।

   

INDI জোটে থাকলেও তৃণমূল বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্য হোক বা ভিন রাজ্য – সংগঠন বিস্তারের প্রশ্নে তারা এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়তে নারাজ। বিজেপি বিরোধী মঞ্চে একত্রে থাকলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। কেরলের মতো রাজ্যে যেখানে বাম-কংগ্রেস জোট দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় এবং তৃণমূলের কোনও সুসংগঠিত ভিত্তি নেই, সেখানেও তারা নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে চাইছে। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে তৃণমূলের এই অগ্রসর হওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে যিনি লড়ছেন, তিনি পি ভি আনবর – একসময়ের এলডিএফ ঘনিষ্ঠ, প্রভাবশালী মুখ। তাঁর হাত ধরেই দক্ষিণের রাজনীতিতে খাতা খুলতে চাইছে তৃণমূল। তবে এই পটভূমিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কেন্দ্র বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এতে একদিকে যেমন কংগ্রেসের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, অন্যদিকে তৃণমূল নিজেকে বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের অভিযোগ, এর আগেও ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়ের মতো রাজ্যে তৃণমূলের প্রবেশ কংগ্রেসের সংগঠন ভাঙতে সাহায্য করেছে। এসব রাজ্যে তৃণমূলের শক্তি কম হলেও নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে বিজেপিকে কার্যত সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে তারা। ফলে কেরলেও এই প্রবণতা রাজনৈতিক বিরোধিতার নতুন মাত্রা এনেছে।

Advertisements

অন্যদিকে, বাংলাতেও তৃণমূল এবং কংগ্রেস-বাম জোটের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে। লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে টেক্কা দিতে এই জোট একাধিকবার লড়েছে। তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, এই জোট আসলে বিজেপির বি টিম হিসেবে কাজ করছে। কালীগঞ্জেও সেই ত্রিমুখী লড়াই অব্যাহত।

এই অবস্থায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে শঙ্কর মালাকারকে ঘিরে। তিনি দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি, একসময়ে বিধায়ক ছিলেন। গুঞ্জন ছড়িয়েছে, খুব শীঘ্রই তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। পাহাড়ের এই প্রবীণ নেতার ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলে দার্জিলিং অঞ্চলে তৃণমূলের সংগঠনের প্রসার ঘটতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এদিকে জানা যাচ্ছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শীঘ্রই সফরে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গে – বিশেষ করে মালদা ও মুর্শিদাবাদে। লোকসভায় মালদায় একটি আসনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। তাই এই জেলাগুলিকে ঘিরে নতুন করে জমি তৈরি করতে চাইছে রাহুল শিবির। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, পাহাড় থেকে সমুদ্র – বারবার কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে উদ্যোগী তৃণমূল কংগ্রেস। INDIA জোটের ভিতরে থেকেও নিজেদের পথেই হাঁটছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। আগামী দিনে বিরোধী ঐক্যে এই অবস্থান আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে চলেছে, তা স্পষ্ট।