আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার মূল স্লোগান ছিল— “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন”। এই স্লোগান দিয়ে তিনি আমেরিকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আবেগ জাগিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্পের নেওয়া একাধিক নীতি ও সিদ্ধান্ত আমেরিকার পরিবর্তে চীনকেই আরও শক্তিশালী করে তুলেছে—অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং চীনের লাভ
২০১8 সালে ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে একতরফা শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার শিল্প ও কর্মসংস্থানকে রক্ষা করা। কিন্তু ফল হলো একেবারে উল্টো। আমেরিকান ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্যের জন্য বেশি দাম দিতে বাধ্য হলেন, আর চীনা কোম্পানিগুলি বিকল্প বাজার খুঁজে বের করে নিজেদের রপ্তানি আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে চীনের বাণিজ্য বাড়ল, ফলে তাদের উপর নির্ভরতা আরও বৃদ্ধি পেল।
প্রযুক্তি ও স্বনির্ভরতার পথে চীন
ট্রাম্প (Donald Trump) আমলে হুয়াওয়ের মতো চীনা প্রযুক্তি সংস্থার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে এর ফলেও উল্টো সুবিধা পেল চীন। বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমিয়ে তারা দেশীয় গবেষণা ও উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), 5G নেটওয়ার্ক, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে চীন নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়। এর ফলে আমেরিকার প্রযুক্তিগত ‘নিয়ন্ত্রণ’ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের ফাঁক চীনের সুযোগ
ট্রাম্প(Donald Trump) প্রশাসন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল করে দেয়। আবার জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তি থেকে আমেরিকা সরে দাঁড়ায়। এই শূন্যস্থান দ্রুত কাজে লাগায় বেইজিং। আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে বিপুল পরিকাঠামো বিনিয়োগ, “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ”-এর প্রসার এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে চীন নিজের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। ট্রাম্পের একপাক্ষিক নীতি বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব দুর্বল করে দেয়, আর সেই সুযোগে চীন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসে।
অর্থনৈতিক সমীকরণে নতুন বাস্তবতা
ট্রাম্পের (Donald Trump) আমলে আমেরিকার অর্থনীতি একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। কৃষি খাতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বাড়ে। কিন্তু চীনের জিডিপি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে তারা ক্রমশ প্রথম স্থানের দিকে এগোতে শুরু করে। কোভিড মহামারির সময় যখন আমেরিকা দিশেহারা, তখন চীন দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটে এবং সাপ্লাই চেইনের উপর তার নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করে।
“আমেরিকা ফার্স্ট” থেকে “চায়না ফার্স্ট”?
ট্রাম্পের স্লোগান ছিল “আমেরিকা ফার্স্ট”, কিন্তু বাস্তবতায় তা পরিণত হয় “চায়না ফার্স্ট”-এ। আমেরিকার অভ্যন্তরে বিভাজন, বর্ণবিদ্বেষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যখন ট্রাম্প প্রশাসন ব্যস্ত, তখন চীন আরও সংগঠিতভাবে বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।