সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (platform-x) গত বৃহস্পতিবার, ২২ মে, একটি ব্যাপক বিভ্রাটের পর এখনও তার প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা (আইএসটি) থেকে প্ল্যাটফর্মটিতে নতুন করে সমস্যার খবর পাওয়া গেছে। ডাউনডিটেক্টর নামে একটি ট্র্যাকিং সার্ভিস জানিয়েছে, বিভ্রাটের শীর্ষ সময়ে ২,১০০-এর বেশি অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে।
ব্যবহারকারীরা লগইন করতে অসুবিধা এবং ডাইরেক্ট মেসেজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এই বিভ্রাট ডেস্কটপ এবং মোবাইল উভয় ডিভাইসে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যাপক অসুবিধা সৃষ্টি করেছে। এক্স কর্তৃপক্ষ এখনও এই ঘটনা সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি।
শনিবার সন্ধ্যায় নতুন করে সমস্যা (platform-x)
বৃহস্পতিবারের বিভ্রাটের পর শনিবার সন্ধ্যায় নতুন করে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ব্যবহারকারীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে। ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীরা এক্স-এর প্ল্যাটফর্মে (platform-x)প্রবেশ করতে এবং এর বিভিন্ন ফিচার ব্যবহার করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। ডাউনডিটেক্টরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সমস্যার রিপোর্ট বাড়তে শুরু করে।
ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, তারা লগইন করার চেষ্টা করলে ‘সার্ভার এরর’ বা ‘কানেকশন ফেইলড’ মেসেজ পাচ্ছেন। অনেকে ডাইরেক্ট মেসেজ পাঠাতে বা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, যা প্ল্যাটফর্মটির মূল ফিচারগুলোর একটি।
এক্স প্ল্যাটফর্মটি (platform-x) বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য তথ্য আদান-প্রদান, সংবাদ শেয়ার এবং মতামত প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই বিভ্রাটের ফলে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ব্যবহারকারীরা তাদের নিয়মিত কার্যক্রমে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
এক্স রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
বিশেষ করে ভারতে, যেখানে এক্স (platform-x) রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, এই বিভ্রাট ব্যবহারকারীদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে জানিয়েছেন, তারা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনা, যেমন নীতি আয়োগের বৈঠক বা জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি।
বিভ্রাটের সময় ব্যবহারকারীরা এক্স-এর (platform-x) মাধ্যমে তাদের অভিযোগ প্রকাশ করার চেষ্টা করলেও, প্ল্যাটফর্মের সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, “এক্স (platform-x) এখন আমাদের কথা বলার জায়গা, কিন্তু এটি নিজেই কথা বলতে পারছে না!” ডাউনডিটেক্টরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশের ব্যবহারকারীরাও এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে মোবাইল অ্যাপে সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে, যদিও ডেস্কটপ সংস্করণেও ব্যবহারকারীরা লগইন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
NDA-র ইতিহাসে প্রথম… ১৭ জন মহিলা ক্যাডেট পাস আউট হবেন
বিভ্রাটের কারণ
এক্স (platform-x) কর্তৃপক্ষ এখনও এই বিভ্রাটের কারণ বা সমাধানের সময়সীমা সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, সূত্র জানায়, এই সমস্যা সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণ বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে হতে পারে। গত বছর থেকে এক্স প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে নতুন ফিচার এবং ইউজার ইন্টারফেসের উন্নতি অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সার্ভারের কার্যকারিতা সামঞ্জস্য করতে গিয়ে এই ধরনের বিভ্রাট ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এই ঘটনা এক্স-এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করলেও, অনেকে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম যেমন ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে তাদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে, এক্স-এর তাৎক্ষণিক তথ্য শেয়ারের ক্ষমতা এবং এর বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে, ব্যবহারকারীরা এই প্ল্যাটফর্মের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিশেষ করে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই প্ল্যাটফর্মটিকে তাদের মতামত প্রকাশ এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেন।
এই বিভ্রাটের প্রেক্ষিতে, ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাগুলোর উপরও প্রভাব পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতি আয়োগের বৈঠক এবং জম্মু ও কাশ্মীরে রাহুল গান্ধীর সফর নিয়ে আলোচনা এক্স-এ ব্যাপকভাবে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভ্রাটের কারণে ব্যবহারকারীরা তাদের মতামত শেয়ার করতে পারেননি। একইভাবে, ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী সংঘর্ষ এবং গুজরাটে গুপ্তচর গ্রেপ্তারের মতো ঘটনাগুলো নিয়েও আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এক্স-এর (platform-x)এই ধরনের বিভ্রাট নতুন নয়। গত বছরও প্ল্যাটফর্মটি বেশ কয়েকবার প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। তবে, এই বিভ্রাটের সময়কাল এবং ব্যবহারকারীদের উপর এর প্রভাব উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্স-এর মতো বৃহৎ প্ল্যাটফর্মের জন্য সার্ভার ক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এছাড়াও, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের বিভ্রাট সাইবার হামলার ফলাফলও হতে পারে, যদিও এখনও এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনা এক্স-এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে মনে করেন, প্ল্যাটফর্মটির উচিত দ্রুত সমাধানের জন্য ব্যবহারকারীদের সঙ্গে স্বচ্ছভাবে যোগাযোগ করা। এক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিন্ডা ইয়াকারিনো বা ইলন মাস্ক এখনও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে আরও হতাশা সৃষ্টি করেছে।
এই বিভ্রাটের ফলে ব্যবহারকারীরা বিকল্প প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকলেও, এক্স-এর তাৎক্ষণিক তথ্য শেয়ারের ক্ষমতা এবং বৈশ্বিক প্রভাব এখনও অতুলনীয়। প্ল্যাটফর্মটি স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসার জন্য প্রযুক্তিগত দল কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, যতক্ষণ না এক্স থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশিত হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীলতা এবং এর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার প্রতি নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।