ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল এসআইআর নিয়ে সরব মহুয়া

ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিহারে চলমান বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে (Mahua Moitra)। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তৃণমূল সাংসদ…

Mahua Moitra on sir

ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিহারে চলমান বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে (Mahua Moitra)। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র দাবি করেছেন যে, “ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। নির্বাচন কমিশন বিজেপির শাখা হিসেবে কাজ করছে।

মহুয়া বলেছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় ভোটারের সংখ্যা ১১,০০০ থেকে বেড়ে ১ লক্ষাধিক হয়েছে। গত ৭৭ লক্ষ ভোটার যাচাইয়ের মধ্যে ২১ লক্ষ (২৭%) মুছে ফেলা হয়েছে। যদি বিহারে ৫৬ লক্ষ অবৈধ ভোটার থাকে, তবে তারা কোথা থেকে এল?” এই অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

   

বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার পটভূমি

নির্বাচন কমিশন বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা শুদ্ধ করার জন্য এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হলো মৃত, স্থানান্তরিত এবং একাধিক স্থানে নথিভুক্ত ভোটারদের নাম মুছে ফেলা এবং শুধুমাত্র যোগ্য ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিহারের মোট ৭.৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৯৮.০১% যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৭.১৭ কোটি ভোটারের তথ্য জমা দেওয়া এবং ডিজিটাইজ করা হয়েছে। তবে, ২১.৬ লক্ষ মৃত, ৩১.৫ লক্ষ স্থানান্তরিত এবং ৭ লক্ষ একাধিক স্থানে নথিভুক্ত ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ১ লক্ষ ভোটারকে “অজ্ঞাতপরিচয়” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অজ্ঞাতপরিচয় ভোটার নিয়ে বিতর্ক

নির্বাচন কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১১,০০০ ভোটারকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বেড়ে ১ লক্ষাধিক হয়েছে। এই ভোটারদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি অবৈধ অভিবাসী, বিশেষ করে বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ব্যক্তিরা ভারতীয় নথি যেমন আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং ভোটার আইডি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই অজ্ঞাতপরিচয় ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ১ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে গভীর তদন্ত করা হবে। তবে, এই সংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং এত বড় সংখ্যক ভোটার মুছে ফেলার প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা করেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ

বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব এই প্রক্রিয়াকে “বিজেপি ও এনডিএ-র ইশারায়” পরিচ “বিহারে নির্বাচন কমিশন বিহারে এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরু করেছে যাতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত, স্থানান্তরিত এবং একাধিক স্থানে নথিভুক্ত ভোটারদের নাম মুছে ফেলা যায়।

এই প্রক্রিয়ায় মোট ৭.৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৯৮.০১% যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ২১.৬ লক্ষ মৃত, ৩১.৫ লক্ষ স্থানান্তরিত এবং ৭ লক্ষ একাধিক স্থানে নথিভুক্ত ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে। তবে, সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো ১ লক্ষাধিক ভোটারকে “অজ্ঞাতপরিচয়” হিসেবে চিহ্নিত করা।

এই সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১১,০০০ ছিল, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেড়ে ১ লক্ষাধিক হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মতে, এই অজ্ঞাতপরিচয় ভোটারদের মধ্যে কিছু অবৈধ অভিবাসী, যেমন বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা, হতে পারে, যারা ভারতীয় নথি অর্জন করেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব এই প্রক্রিয়াকে “বিজেপি ও এনডিএ-র ইশারায়” পরিচালিত বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি এভাবে ভোটার তালিকা থেকে লক্ষ লক্ষ নাম মুছে ফেলে, তবে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত বলে মনে হয়। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজন কী?” তিনি এমনকি নির্বাচন বয়কটের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন।

Advertisements

রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলি এই প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের উপর আঘাত হিসেবে দেখছে। তারা দাবি করেছে যে এই প্রক্রিয়া দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যেমন তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

অবৈধ ভোটার নিয়ে সন্দেহ

নির্বাচন কমিশনের মতে, ৫৬ লক্ষ ভোটারের মধ্যে যারা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী হতে পারে। এই অভিযোগে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ, নেপাল এবং মায়ানমারের কিছু ব্যক্তি ভারতীয় নথি, যেমন আধার কার্ড এবং ভোটার আইডি, অর্জন করেছে।

তবে, এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে এই অজ্ঞাতপরিচয় ভোটারদের বিষয়ে গভীর তদন্ত করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় ১.৫ লক্ষ বুথ-লেভেল এজেন্ট এবং ১২টি প্রধান রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

গ্লোবাল সাউথকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে ভারত, জানাল কেন্দ্র

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য

নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলিকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, “একটি বিশুদ্ধ ভোটার তালিকা তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হচ্ছে।

অযোগ্য ব্যক্তিদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া সংবিধানের বিরুদ্ধে।” তিনি আরও বলেন, ১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনসাধারণ এবং রাজনৈতিক দলগুলি ভোটার তালিকায় ভুল সংশোধন বা নতুন নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আপত্তি জানাতে পারবে।

বিহারের এই এসআইআর প্রক্রিয়া ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। ৫৬ লক্ষ ভোটারের নাম মুছে ফেলা এবং ১ লক্ষাধিক অজ্ঞাতপরিচয় ভোটারের বিষয়টি গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

বিরোধী দলগুলির বয়কটের হুমকি এবং সুপ্রিম কোর্টে এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে চলমান মামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী দিনে এই প্রক্রিয়ার ফলাফল বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।