প্রায় দু’সপ্তাহের জল্পনা, রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং দলের অভ্যন্তরে কৌশলগত আলাপ-আলোচনার পর মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ (Devendra Fadnavis)। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে এবং এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার (Ajit Pawar)।
‘মোদী-আদানি এক হ্যায়…’ লেখা জ্যাকেট পরে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব রাহুল-প্রিয়াঙ্কা
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি-শিবসেনা এবং এনসিপি জোট নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। মহাযুটি (মহা ইউতি) জোটের বিশাল জয়ের পর থেকে জোটের শরিক দলগুলির মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। প্রথমে একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এগিয়ে রাখা হলেও, শেষ মুহূর্তে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ কেই মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি।
বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, মহারাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফড়নবিশ ের নেতৃত্বে দল ইতিমধ্যেই একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং জনগণের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
এবারের সরকার গঠনে ‘১+২’ ফর্মুলা বজায় রাখা হয়েছে, অর্থাৎ একজন মুখ্যমন্ত্রী এবং দুইজন ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী। তবে এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। যেখানে শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে এবং এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার আগের মতোই ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর পদে বহাল থাকলেন, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হল দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে।
আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা, তীব্র চাঞ্চল্য
শপথ গ্রহণের পর দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মহারাষ্ট্রবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমি মহারাষ্ট্রের জনগণের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করব। উন্নয়ন ও সুশাসনই আমাদের সরকারের একমাত্র লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, “এই জোট মহারাষ্ট্রের মানুষের জন্য কাজ করবে এবং নতুন দিশা দেখাবে।”
ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে শপথ গ্রহণের পর বলেন, “আমাদের জোট মহারাষ্ট্রের মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ। উন্নয়ন এবং সুশাসন বজায় রাখাই আমাদের অগ্রাধিকার। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ের অভিজ্ঞ নেতৃত্বে আমরা মহারাষ্ট্রের নতুন দিগন্ত খুলব।”
এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার, যিনি এনসিপি থেকে শিবির ভেঙে মহাযুটি জোটে যোগ দিয়েছিলেন, তিনি ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তাঁর উপস্থিতি জোটের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বইয়ের রাজভবনে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, মহাযুটি জোটের সদস্য, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যপাল রমেশ বাইশ দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অন্যান্য মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান।
এই সরকার গঠনের পর থেকেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। মহাযুটি সরকারের মধ্যে সমন্বয় এবং ক্ষমতার ভাগাভাগি কতটা কার্যকরী হবে তা এখনই বলা কঠিন। দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ের নেতৃত্বে আগের সরকারে যেমন উন্নয়নমূলক কাজের গতি ছিল, এবারও তেমনই প্রত্যাশা রয়েছে।
তবে, বিরোধী দলগুলি এই সরকারকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আক্রমণ শানিয়েছে। কংগ্রেস এবং শিবসেনার উদ্ভিন্ন শাখা নেতৃত্বের দাবি, মহাযুটি সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তৈরি হয়েছে এবং তাদের লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ নয়।
Maharashtra: জটিলতার অবসান! ফড়নবীশই মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী
মহারাষ্ট্রের নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয়েছে। দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ের নেতৃত্বাধীন এই সরকার কতটা সাফল্য অর্জন করতে পারবে এবং মহারাষ্ট্রবাসীর আস্থা কতটা ধরে রাখতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মহাযুটি জোটের অঙ্গীকার এবং অগ্রাধিকার যে উন্নয়ন এবং সুশাসন, তা পরিষ্কার হয়েছে।
এই সরকার কেবল মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতেই নয়, জাতীয় স্তরেও বিজেপির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।