লখনউ: সমাজে ন্যায়বিচারের নামে প্রতারণা, এবং শেষমেশ কড়া পদক্ষেপ। লখনউ এসসি/এসটি আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ে আইনজীবী পরমানন্দ গুপ্ত ও পুজা রাওয়াতকে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা ঘোষণা করেছে। আদালতের রায় অনুযায়ী, অভিযুক্ত দুজন ১১টি ভুয়ো এসসি/এসটি মামলা দায়ের করেছিলেন এবং এই মামলাগুলির মাধ্যমে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা হাতানোর চেষ্টা করেছিলেন।
মামলার তদন্ত অনুযায়ী, পরমানন্দ গুপ্ত ছিলেন লখনউ আদালতের এক প্র্যাকটিসিং আইনজীবী। তিনি পুজা রাওয়াত নামের এক নারীর সঙ্গে মিলে সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়েছিল, অভিযুক্তরা দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর নির্যাতন চালিয়েছেন। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে, এই সমস্ত ঘটনাই ছিল সম্পূর্ণ মনগড়া ও প্রমাণহীন।
‘ধোঁকা’ বিজ্ঞাপনে ফাঁসল পতঞ্জলি! হাইকোর্টের তুমুল ভর্ৎসনা
তদন্তের সময় পুলিশের হাতে উঠে আসে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি ও সাক্ষ্য, যেখানে দেখা যায়—এই দুজন ব্যক্তি একাধিক থানায় একই ধরনের অভিযোগ দায়ের করেছেন, শুধু নাম-ঠিকানা বদল করে। এমনকি, ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার পর পুজা রাওয়াত সেই অর্থের কিছু অংশ আইনজীবীর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন বলেও প্রমাণ মেলে।
রায় ঘোষণার সময় বিচারক মন্তব্য করেন“এসসি/এসটি আইন সমাজের পিছিয়ে পড়া ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু এই আইনকে ব্যবহার করে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির চেষ্টা করা সমাজ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি এক গুরুতর অপরাধ।” আদালত পরমানন্দ গুপ্তকে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ৪৫,০০০ টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি, পুজা রাওয়াতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত মামলায় তিনি মিথ্যা ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন, তা সরকারের তহবিলে ফেরত দিতে হবে।
এই রায় ঘোষণার পর আইনি মহলে আলোড়ন পড়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি দেশের বিচারব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ নজির। কারণ, এসসি/এসটি আইনকে প্রায়ই রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ শোনা যায়। এই রায় দেখিয়ে দিল—বিচারব্যবস্থা ন্যায়ের পক্ষে, প্রতারণার পক্ষে নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায়ও রায়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বহু মানুষ লিখছেন—“ন্যায়বিচার মানে শুধু নির্যাতিতের সুরক্ষা নয়, মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্তদেরও সম্মান রক্ষা।” আবার কেউ কেউ বলছেন—“এটি সেই প্রথম পদক্ষেপ, যা এসসি/এসটি আইনের অপব্যবহার রুখতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, এই রায়ের পর রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও এমন ভুয়ো মামলার তদন্ত নতুন করে শুরু হতে পারে। রাজ্য প্রশাসনও এখন আইনজীবীদের পেশাগত আচরণ নিয়ে নতুন করে নজরদারি বাড়ানোর কথা ভাবছে।


