কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি মডেল ও অভিনেত্রী শান্তা পালের ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে (Shanta)। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণী, যিনি একজন প্রাক্তন এয়ারলাইন ক্রু সদস্য এবং ফুড ও ট্রাভেল ভ্লগার হিসেবে পরিচিত, ভারতে জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বসবাসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন।
তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভারতে মেডিক্যাল ভিসার মাধ্যমে প্রবেশ ও বসবাসের পরামর্শ দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, যা পুলিশের তদন্তের কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা ভিসার অপব্যবহার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।
২০২৫ সালের ৩০ জুলাই কলকাতার বিক্রমগড় এলাকায় শান্তা পালকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। তিনি বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা এবং ২০২৩ সালে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তবে, তার ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র, যেমন আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড, ব্যবহার করে ভারতে বসবাস করছিলেন।
সমালোচকদের একাংশের প্রশ্ন শান্তা কি ধরণের অসুস্থতায় ভুগছিলেন তা না পরীক্ষা করেই মেডিক্যাল ভিসা ইস্যু করা হয়। তারা আরও বলেছেন যে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিভাবে এতো ভুয়ো নথি জোগাড় করল শান্তা।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, শান্তা তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ‘আসান ট্রাভেলস কলকাতা অ্যান্ড বাংলাদেশ’ নামে একটি পেজের মাধ্যমে ভ্রমণ ব্যবসা প্রচার করতেন এবং চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে প্রবেশের পরামর্শ দিতেন। তার ভ্লগে তিনি বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে চিকিৎসা ভিসার আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, বিশেষ করে যখন গত বছর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উত্তেজনার কারণে পর্যটক ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শান্তা সিকিমের নাথুলা পাসসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন এবং সেখানে ভ্লগ তৈরি করেছেন, যা তার বিরুদ্ধে সন্দেহ জাগিয়েছে। পুলিশ এখন তদন্ত করছে, শান্তা কতজনকে চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে প্রবেশে সহায়তা করেছেন এবং এর মধ্যে কোনো অবৈধ কার্যক্রম জড়িত ছিল কিনা।
ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে উদার নীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশের অনেক রোগী কলকাতা, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ এবং বেঙ্গালুরুর মতো শহরে অবস্থিত ভারতের উন্নত চিকিৎসা সুবিধার জন্য ভ্রমণ করেন। তবে, শান্তার ঘটনা চিকিৎসা ভিসার অপব্যবহারের বিষয়টিকে সামনে এনেছে।
পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, শান্তা ২০২০ সালে বর্ধমানের একটি ঠিকানা ব্যবহার করে আধার কার্ড তৈরি করেছিলেন এবং ভোটার কার্ডও সংগ্রহ করেছিলেন। এই জাল নথিপত্র ব্যবহার করে তিনি ভারতে বসবাস করছিলেন এবং এমনকি একটি প্রতারণার মামলায় থাকুরপুকুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ভিসার জন্য আবেদনকারীদের বৈধ পাসপোর্ট, চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি এবং ভারতীয় হাসপাতাল থেকে আমন্ত্রণপত্র জমা দিতে হয়। তবে, শান্তার মতো কিছু ব্যক্তি জাল নথিপত্র ব্যবহার করে এই ব্যবস্থার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনা ভারতের ভিসা নীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর ফলে ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে, বিশেষ করে পর্যটক ভিসার ক্ষেত্রে।
ফলস্বরূপ, অনেকে চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তবে, শান্তার ঘটনা দেখায় যে, কিছু ক্ষেত্রে এই ভিসা ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করা হচ্ছে। এই ঘটনা ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং ভিসা প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মনে করছেন, শান্তার মতো ব্যক্তিরা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে ভারতে বসবাস করছেন, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন, ভারতের উন্নত চিকিৎসা সুবিধার কারণে বাংলাদেশি রোগীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা উচিত।পুলিশের তদন্ত ও অভিযোগকলকাতা পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, শান্তা পাল তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভ্রমণ ও জীবনধারা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে সিকিমের নাথুলা পাস পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন এবং এই অভিজ্ঞতা ভ্লগের মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
পুলিশ এখন তদন্ত করছে, শান্তা কোনো গোয়েন্দাগিরির কাজে জড়িত ছিলেন কিনা। তার সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সন্দেহভাজন জ্যোতি মালহোত্রার তুলনা করা হচ্ছে, যিনিও জাল নথিপত্র ব্যবহার করে ভারতে বসবাস করছিলেন। পুলিশ আরও জানিয়েছে, শান্তা একটি ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ ছিল।
এই তথ্য তদন্তের অংশ হিসেবে যাচাই করা হচ্ছে। শান্তা পালের গ্রেপ্তার ভারতের চিকিৎসা ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার এবং অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টিকে সামনে এনেছে। তার ট্রাভেল ভ্লগে চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে প্রবেশের পরামর্শ দেওয়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভিসা নীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ইংল্যান্ড সফর শেষেই ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পথে শামি
এই ঘটনা ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে, যাতে অবৈধ অভিবাসন রোধ করা যায়। একই সঙ্গে, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার দাবিও উঠছে, যাতে প্রকৃত রোগীরা উপকৃত হতে পারেন। ভবিষ্যতে এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং ভিসা নীতির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।