দেশে প্রথম সিনিয়র সিটিজেন কমিশন গঠন করল বাম সরকার

কেরল সরকার (Left Government) ভারতের প্রথম সিনিয়র সিটিজেন কমিশন গঠন করেছে, যা বয়স্ক নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই…

Left Government

কেরল সরকার (Left Government) ভারতের প্রথম সিনিয়র সিটিজেন কমিশন গঠন করেছে, যা বয়স্ক নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই কমিশনটি কেরল স্টেট সিনিয়র সিটিজেন কমিশন অ্যাক্ট, ২০২৫-এর অধীনে গঠিত হয়েছে এবং এর সদর দপ্তর তিরুবনন্তপুরমে অবস্থিত।

প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ এবং কোল্লাম জেলা পঞ্চায়েতের সভাপতি কে. সোমপ্রসাদকে এই কমিশনের প্রথম চেয়ারপার্সন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ড. আর. বিন্দু জানিয়েছেন, এই কমিশন বয়স্কদের অবহেলা, শোষণ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মতো সমস্যাগুলির সমাধান করবে।

   

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ী বিজয়ন এই উদ্যোগকে “নতুন কেরল” গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এলডিএফ সরকার বয়স্ক নাগরিকদের কল্যাণের জন্য নিবেদিত নীতি বাস্তবায়ন করছে। কেরল, যা বয়স্কদের কল্যাণে দেশে প্রথম স্থানে রয়েছে, এই কমিশনের মাধ্যমে আরেকটি উদাহরণ স্থাপন করছে।” তিনি আরও জানান, এই কমিশন বয়স্কদের পুনর্বাসন, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

কেরলের বয়স্ক জনসংখ্যার হার জাতীয় গড়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০২১ সালের হিসেবে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৬.৫% ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী, যা জাতীয় গড় ১০.৫%-এর তুলনায় অনেক বেশি। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) ভারতের বয়স্ক জনসংখ্যা বিষয়ক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩৬ সালের মধ্যে কেরালায় এই হার ২২.৮%-এ পৌঁছাবে।

এই ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে অনেকেই দারিদ্র্য, অবহেলা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হচ্ছেন, বিশেষ করে বিধবা মহিলারা। এই কমিশন গঠনের মাধ্যমে কেরালা এই চ্যালেঞ্জগুলির সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

কমিশনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বয়স্কদের অধিকার সুরক্ষা, তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং সমাজে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। এটি একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে এবং দেওয়ানি আদালতের সমতুল্য ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।

কমিশন অভিযোগ তদন্ত করতে, প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদান করতে এবং বয়স্কদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। এছাড়াও, কারাগার বা হেফাজতে থাকা বয়স্কদের অভিযোগ তদন্তের জন্যও এটি কাজ করবে।

Advertisements

মন্ত্রী আর. বিন্দু জানিয়েছেন, কমিশন বয়স্কদের জন্য সময়মতো পেনশন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প এবং আর্থিক পরামর্শ প্রদানে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, “বয়স্ক নাগরিকদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার ভান্ডার রয়েছে।

তাদের সমাজে অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা হলে তাদের মধ্যে উদ্দেশ্য এবং সম্পৃক্ততার বোধ জাগবে।” এই কমিশনের গঠন কেরালার বয়স্কদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

কমিশনের গঠনের জন্য কেরালা সরকার ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল, যা পরে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রাজ্য বিধানসভায় কেরালা স্টেট সিনিয়র সিটিজেন কমিশন বিল হিসেবে পাস হয়।

এই কমিশনের চেয়ারপার্সন এবং সর্বাধিক তিনজন সদস্য সিনিয়র সিটিজেনদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হবেন, যার মধ্যে একজন মহিলা এবং একজন তফসিলি জাতি বা উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকবেন। কমিশনের বার্ষিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা, এবং প্রাথমিক স্থাপনার জন্য ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

বিহার নির্বাচনে নীতিশের অস্ত্র “নারীশক্তি”! কোন পথে বিরোধীরা?

এই উদ্যোগ কেরালার বয়স্ক জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০১১ সালের জাতীয় নীতিতে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য এই ধরনের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল, কিন্তু কেরালা প্রথম রাজ্য হিসেবে এটি বাস্তবায়ন করেছে। এই কমিশনের মাধ্যমে কেরালা বয়স্কদের মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং সমাজে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পথে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।