লালু পরিবারে ভাঙন নিয়ে জল্পনা, চিরাগের বক্তব্যে নয়া বিতর্ক

Lalu Prasad Yadav Household Dispute Draws Response from Chirag Paswan

বিহারের রাজনীতি আর পারিবারিক জটিলতার মধ্যে লালু প্রাসাদ যাদবের পরিবার এই মুহূর্তে পুরো দেশের নজর কাড়ছে। বিগত কয়েক মাস ধরেই আরজেডি (রাষ্ট্রীয় জনতা দল)-এর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পারিবারিক বিরোধ উস্কে দিচ্ছে নানা জল্পনা। সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলও দলের জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। মাত্র ২৫টি আসন জিততে পেরেছে আরজেডি, যা দীর্ঘদিনের পারফরম্যান্সের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট হতাশাজনক। এই ফলাফলের পর দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মনমরা পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, বিশেষত দলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা স্পষ্ট ছিল।  

Advertisements

এই অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে লালু পরিবারের ভিতরের বিরোধের কারণে। বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে আগেই ‘ত্যাজ্য’ করেছিলেন লালু প্রাসাদ যাদব। পরিবারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন মূলত ছোট ছেলে তেজস্বীর হাতে কেন্দ্রীভূত। কিন্তু এই কেন্দ্রীভূত নেতৃত্বও এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সম্প্রতি লালু প্রাসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য কার্যত ‘বোমা’ ফাটিয়েছেন। তিনি তেজস্বী এবং তাঁর সহযোগীদের তোপ দিয়ে পরিবার ও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পর বিহার তথা জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও এই ঘটনা নিয়ে বড় ধরনের আলোচনার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে লালু প্রাসাদ যাদব ও তেজস্বী যাদব আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পারিবারিক বিবাদের মধ্যে সরাসরি কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন তারা। কিন্তু এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ান। চিরাগ বলেন, “আমি মনে করি না একটি মেয়ের শ্বশুরবাড়িই একমাত্র বাড়ি। আমি এই ধরনের পুরনো ও মরচে পড়া ধারণাকে সমর্থন করি না।” এই মন্তব্যে চিরাগ স্পষ্টভাবে নারীর স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার পক্ষে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।

   

চিরাগ (Chirag Paswan) আরও বলেন, “আমি পারিবারিক বিবাদ নিয়ে মন্তব্য করব না। আশা করি এই সমস্যা শীঘ্রই সমাধান হবে। আমিও জীবনে অনেক ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরনের বিরোধ দেখেছি। কিন্তু লালু পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক সবসময় ব্যক্তিগত ও হৃদয়ঙ্গম। তেজস্বী, তেজ, মিসা এবং রোহিণীকে আমি আমার নিজের ভাই-বোনের মতো মনে করি। আমি প্রার্থনা করি, তাদের পারিবারিক সমস্যা খুব দ্রুত মিটে যাক।” চিরাগের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, পারিবারিক বন্ধন ও রাজনৈতিক বিরোধকে তিনি আলাদা রাখেন এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ককে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লালু পরিবারে এই ধরনের পারিবারিক টানাপোড়েন নতুন নয়। তবে এবার পরিস্থিতি প্রকাশ্য আকারে এসেছে। পারিবারিক মতবিরোধ এবং রাজনীতির চাপ একসাথে মিশে সাধারণ মানুষের নজর কাড়ছে। রোহিণীর এমন ধরণের ঘোষণার পর দলীয় নেতৃত্বও কিছুটা চুপ। এটি স্পষ্ট করে যে, এখন পারিবারিক ও রাজনৈতিক সমীকরণ দুটি একসাথে সামলানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চিরাগ পাসোয়ান যেভাবে পারিবারিক বিবাদে সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। তিনি জানিয়েছেন, পারিবারিক সমস্যা যেকোনো রাজনৈতিক বিরোধের চেয়ে আলাদা এবং এই ধরনের সমস্যার সমাধান সময়মতো হওয়া উচিত। বিশেষত নারীর স্বাধীনতা, তার অধিকার এবং পরিবারের ভিতরে সমান মর্যাদা বজায় রাখা খুবই জরুরি। এই প্রসঙ্গে চিরাগের মন্তব্য সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

Advertisements