ওড়িশার কোরাপুট জেলার জয়পুর ফরেস্ট রেঞ্জের (Forest Officer)ডেপুটি রেঞ্জার তথা ইন-চার্জ রেঞ্জার রাম চন্দ্র নেপাকের বিরুদ্ধে আয়ের তুলনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে ওড়িশা ভিজিল্যান্স বিভাগের বড় ধরনের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নগদ এবং সোনা উদ্ধার হয়েছে।
শুক্রবার সকালে শুরু হওয়া এই তল্লাশি অভিযানে নেপাকের জয়পুরের ফ্ল্যাটে লুকানো একটি গোপন ট্রেজারি থেকে প্রায় ১.৪ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়েছে। মোট নগদ উদ্ধারের পরিমাণ প্রায় ১.৪৪ কোটি টাকা।
এছাড়াও, চারটি সোনার বিস্কুট এবং ১৬টি সোনার কয়েনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার প্রতিটি কয়েনের ওজন ১০ গ্রাম। এই ঘটনা রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির একটি চাঞ্চল্যকর উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।
ভিজিল্যান্সের অভিযান
ওড়িশা ভিজিল্যান্স বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাম চন্দ্র নেপাকের বিরুদ্ধে আয়ের তুলনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে জয়পুরের বিশেষ বিচারকের অনুমোদিত সার্চ ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়। ছয়জন ডিএসপি, পাঁচজন ইন্সপেক্টর, নয়জন এএসআই এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মীদের নিয়ে গঠিত একটি দল জয়পুর এবং ভুবনেশ্বরে নেপাকের সঙ্গে সংযুক্ত ছয়টি স্থানে একযোগে তল্লাশি চালায়।
তল্লাশির সময় ফ্ল্যাট নম্বর ৫১০-এ একটি গোপন ট্রেজারি থেকে ১.৪ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়, যা মোট উদ্ধারের পরিমাণকে ১.৪৪ কোটি টাকায় নিয়ে যায়। এছাড়াও, চারটি সোনার বিস্কুট এবং ১৬টি ১০ গ্রাম ওজনের সোনার কয়েন জব্দ করা হয়। সোনার সঠিক ওজন এবং মূল্য নির্ধারণের কাজ চলছে। নগদ টাকা গণনার জন্য ভিজিল্যান্স দল কারেন্সি কাউন্টিং মেশিন ব্যবহার করছে।
রাম চন্দ্র নেপাকের পটভূমি
রাম চন্দ্র নেপাক ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ কোরাপুট সোশ্যাল ফরেস্ট্রি বিভাগে গ্রাম ফরেস্ট ওয়ার্কার হিসেবে যোগ দেন। সোশ্যাল ফরেস্ট্রি এবং টেরিটোরিয়াল ফরেস্ট ডিভিশনের একীভূত হওয়ার পর তিনি জয়পুর ফরেস্ট (টেরিটোরিয়াল) ডিভিশনে পোস্টিং পান।
বর্তমানে তিনি জয়পুর ফরেস্ট রেঞ্জের ডেপুটি রেঞ্জার তথা ইন-চার্জ রেঞ্জার হিসেবে কর্মরত। তাঁর মাসিক নেট বেতন ৬৯,৬৮০ টাকা এবং গ্রস বেতন ৭৬,৮৮০ টাকা। এত কম আয়ের তুলনায় এই বিপুল পরিমাণ নগদ এবং সোনার উৎস নিয়ে ভিজিল্যান্স বিভাগ তদন্ত করছে।
ভিজিল্যান্সের তদন্ত
ভিজিল্যান্স বিভাগ জানিয়েছে যে নেপাকের সম্পত্তির পরিমাণ তাঁর পরিচিত আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। তল্লাশির সময় উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে একটি তিনতলা ভবন, তিনটি ফ্ল্যাট, এবং একটি কিয়া ক্যারেন্স গাড়ি। ভিজিল্যান্স দল এখনও নেপাকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত করছে। তদন্তের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা ওড়িশার প্রশাসনিক মহলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ভিজিল্যান্স বিভাগের এই অভিযান রাজ্যের দুর্নীতি দমনের প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগেও ওড়িশায় একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নগদ এবং সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে মালকানগিরির একজন সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি থেকে ১.৩৯ কোটি টাকা এবং ১.২ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির গভীরতা প্রকাশ করে।
লাইকের লোভে রিলে বিপদ, রেল কর্তৃপক্ষের কড়া পদক্ষেপ
জনমনে প্রভাব
রাম চন্দ্র নেপাকের ঘটনা কোরাপুটের স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে ফরেস্ট বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা যদি এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তবে সাধারণ মানুষের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মন্তব্য করেছেন যে এই ধরনের অভিযান আরও নিয়মিত হওয়া উচিত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
ওড়িশা ভিজিল্যান্সের এই অভিযান রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাম চন্দ্র নেপাকের বিরুদ্ধে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ নগদ এবং সোনা তাঁর আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যা গভীর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে।
ভিজিল্যান্স বিভাগের তদন্তের ফলাফল এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এই ঘটনা সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্বের উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।