ভারত-রাশিয়ার মধ্যে Klub-S অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল চুক্তি সাক্ষর

অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি বড় চুক্তি করেছে ভারত। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ভারতীয় নৌসেনার সাবমেরিন ফ্লিটের অপারেশনাল সক্ষমতাকে শক্তিশালী করা। তবে প্রতিরক্ষা…

Klub-S anti ship cruise missile

অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি বড় চুক্তি করেছে ভারত। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ভারতীয় নৌসেনার সাবমেরিন ফ্লিটের অপারেশনাল সক্ষমতাকে শক্তিশালী করা। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম, সংখ্যা এবং দাম সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি। প্রতিরক্ষা সংস্থার সূত্রের মতে, এই চুক্তির মধ্যে রয়েছে Klub-S ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা, যা Kalibr ক্ষেপণাস্ত্র পরিবারের অংশ। এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিশেষভাবে সাবমেরিনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। 

ভারত প্রায় $200 মিলিয়ন মূল্যের 20টি Klub-S অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল কেনার পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে রাশিয়ান নৌসেনা এই ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। ভারতীয় নৌসেনাও ইতিমধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যবহার করছে। এই অতিরিক্ত ক্রয় ভারতের ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন ফ্লিটকে সমর্থন করার জন্য করা হচ্ছে, যার মধ্যে ছয়টি রাশিয়ান-অরিজিন কিলো-ক্লাস বা সিন্ধুঘোষ-শ্রেণীর সাবমেরিন রয়েছে।

   

Advertisements

Klub-S অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য
Klub-S মিসাইল সিস্টেমে 400 কেজি ওয়ারহেড পেলোড রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আমাদের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বাড়াবে। এটি 300 কিলোমিটার পর্যন্ত স্থলভাগের জাহাজ, সাবমেরিন এবং স্থল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

এই সিস্টেমে ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, ভার্টিক্যাল লঞ্চার ইউনিট (VLU) এবং গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিপজ্জনক এলাকা এবং বাধা এড়াতে ক্ষেপণাস্ত্রটি তার উচ্চতা এবং দিক সামঞ্জস্য করতে সক্ষম। এটি শত্রুর ভারী আগুন এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেম সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এই ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিনেও মোতায়েন করা যাবে। শত্রুর অস্ত্র ঠেকানোর জন্য এটি একটি শক্তিশালী অস্ত্র।

 

সিন্ধুঘোষ শ্রেণীর সাবমেরিনের শক্তি বৃদ্ধি পাবে
এই চুক্তির আওতায় রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া এই অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইলগুলি ভারতীয় নৌসেনার সিন্ধুঘোষ শ্রেণীর সাবমেরিনগুলির শক্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। এই সাবমেরিনগুলি রাশিয়ান কিলো শ্রেণীর ভারতীয় সংস্করণ এবং ১৯৮৬ সাল থেকে নৌবাহিনীর অংশ। সমুদ্রে শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য এই সাবমেরিনগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

যদিও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা এবং তাদের সরবরাহের সময়রেখা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, সূত্র বলছে যে এগুলি 3M-54 Klub-S ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র 220 থেকে 300 কিলোমিটার রেঞ্জে নৌ এবং স্থল লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করতে সক্ষম।

নৌবাহিনীতে সিন্ধুঘোষ-শ্রেণীর সাবমেরিনের ভূমিকা
ডুবোজাহাজ বহর জলের নিচে যুদ্ধ এবং জাতীয় কৌশলগত নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় নৌসেনা কালভারী, সিন্ধুঘোষ এবং শিশুমর শ্রেণীর সাবমেরিন পরিচালনা করে। সিন্ধুঘোষ-শ্রেণী বা কিলো-শ্রেণীর সাবমেরিন হল ডিজেল-বৈদ্যুতিক সাবমেরিন যা রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে নির্মিত।

এগুলি দীর্ঘ পাল্লার টহল দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং টর্পেডো এবং মিসাইল দিয়ে সজ্জিত। এই বহরে রয়েছে আইএনএস সিন্ধুঘোষ, আইএনএস সিন্ধুধ্বজ, সিন্ধুরাজ, আইএনএস সিন্ধুবীর, আইএনএস সিন্ধুরত্ন, আইএনএস সিন্ধুকেশরী, আইএনএস সিন্ধুকীর্তি, আইএনএস সিন্ধুবিজয়, আইএনএস সিন্ধুরক্ষক এবং আইএনএস সিন্ধুশাস্ত্র। যাইহোক, আইএনএস সিন্ধুধ্বজ, আইএনএস সিন্ধুরক্ষক এবং আইএনএস সিন্ধুবীর আর পরিষেবাতে নেই এবং আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আরও দুটি সাবমেরিন অবসর নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

India-Russia Klub-S anti ship cruise missile deal

নৌসেনার আধুনিকায়নের দিকে বড় পদক্ষেপ
এই চুক্তি ভারতীয় নৌসেনার আধুনিকীকরণের বিস্তৃত কৌশলের অংশ। সিন্ধুঘোষ শ্রেণীর সাবমেরিনগুলি ইতিমধ্যে অনেক আধুনিক ব্যবস্থায় সজ্জিত। এখন এসব ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজনের ফলে নৌবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা আরও জোরদার হবে, যাতে সামুদ্রিক হুমকি মোকাবিলা আরও কার্যকরভাবে করা যায়।

এই প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো সামরিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করে। বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই চুক্তিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংযোজন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

ভারত রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের একটি বড় আমদানিকারক হয়ে উঠেছে
ভারত বিশ্বে রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বৃহত্তম আমদানিকারক। ভারতের সামরিক হার্ডওয়্যারের ৬৭ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। Klub-S ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি শুধুমাত্র ভারতের নৌসেনাকে শক্তিশালী করবে না বরং ভারত-রাশিয়ার প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

কৌশলগত জলে উপস্থিতি বাড়বে
এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা তার সমুদ্রসীমার নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পদক্ষেপটি সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় ভারতীয় নৌসেনার প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করবে এবং দেশের কৌশলগত অবস্থানকেও উন্নত করবে।