HomeBharatসন্ত্রাস রোধে নাগরিক-জাতীয় পরিকল্পনার প্রস্তাব কিরণ বেদির

সন্ত্রাস রোধে নাগরিক-জাতীয় পরিকল্পনার প্রস্তাব কিরণ বেদির

- Advertisement -

দেশে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নাগরিক সহযোগিতা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করলেন দেশের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদি (Kiran Bedi)। এক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে তিনি দাবি করেছেন যে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি “সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত Citizens–National Plan” বা নাগরিক-জাতীয় পর্যায়ের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা জরুরি হয়ে উঠেছে। তাঁর বক্তব্য ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং কৌশলবিদদের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

PTI–র প্রকাশিত আপডেট অনুযায়ী, কিরণ বেদি বলেছেন—দেশে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তাঁর মতে, “নাগরিকদের নির্লিপ্ততার সময় শেষ হয়ে গেছে। প্রত্যেক মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ-কান হয়ে উঠতে হবে।”

   

বেদির মতে, ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন উপায়ে সক্রিয় হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি নাগরিক যদি সতর্ক থাকে এবং সন্দেহজনক গতিবিধি সম্পর্কে দ্রুত পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থাকে জানিয়ে সহায়তা করে, তাহলে অনেক ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি তুলে ধরেছেন যে অনেক দেশের নিরাপত্তা কাঠামোই নাগরিক-সহযোগিতাকে একটি প্রধান স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করে, এবং ভারতেও এমন একটি ব্যবস্থা জোরদার করার সময় এসেছে।

এর পাশাপাশি কিরণ বেদি জোর দিয়েছেন কো-অর্ডিনেটেড গ্রাসরুটস ইন্টেলিজেন্স, অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকে আরও শক্তিশালী করার ওপর। তাঁর মতে, স্থানীয় স্তরে পুলিশ, বিট অফিসার, সম্প্রদায়ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক এবং নাগরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় আরও দৃঢ় হওয়া দরকার। এই ধরনের সমন্বিত গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ছোট সূত্র, নিত্যদিনের সন্দেহজনক আচরণ, পরিচিত অপরাধ প্রবণতা—সবই তাড়াতাড়ি শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ শুধুমাত্র বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থা বা জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোর দায়িত্ব নয়। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে প্রত্যেকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচুতলার গোয়েন্দা কার্যক্রম যত শক্তিশালী হবে, তত সহজ হবে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাকে কার্যকর রাখা।”

বেদির মন্তব্যে বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে কিছু ঘাটতি রয়েছে, সেই দিকটিও উঠে আসে। অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন যে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্তরে পুলিশ-নাগরিক সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। বেদির বক্তব্য সেই সম্পর্ক পুনর্গঠনেরও ইঙ্গিত দেয়। তিনি উল্লেখ করেছেন যে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, নিরাপত্তা–বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং সন্দেহজনক আচরণ চিনে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানো হলে বহু সমস্যার সমাধান শুরুতেই করা সম্ভব।

নাগরিক-জাতীয় পরিকল্পনার ধারণা নতুন নয়। বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শহরে কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বাড়ানো হয়। বেদি মনে করেন, ভারতে এই মডেলটি যথাযথ প্রয়োগ করা হলে বড় শহর থেকে ছোট গ্রাম—সব জায়গাতেই অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের প্রবণতা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কিছু অংশ এই প্রস্তাবের সঙ্গে সতর্কতারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, নাগরিকদের অতিরিক্তভাবে নজরদারিতে যুক্ত করা হলে তার সামাজিক প্রভাব, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং ভুল অভিযোগের মতো বিষয় সামনে আসতে পারে। তাই এর জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো, নীতি এবং সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত সমন্বয় ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

বেদির বক্তব্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো নাগরিকদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নয়। তিনি বলেন, “দেশের নিরাপত্তা সরকারের একমাত্র দায়িত্ব নয়। নাগরিকদের দায়িত্ববোধ, সতর্কতা এবং সহযোগিতা ছাড়া একটি নিরাপদ সমাজ তৈরি করা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও যোগ করেন যে সন্ত্রাসবাদের আধুনিক রূপ প্রযুক্তি–নির্ভর এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। ফলে নিরাপত্তার প্রচলিত পদ্ধতি যথেষ্ট নয়। দরকার প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, ডেটা–ভিত্তিক গোয়েন্দা তথ্য এবং নাগরিক স্তর থেকে সংগৃহীত ছোট ছোট তথ্য—যা মিলিয়ে বড় চিত্র তৈরি হবে।

সব মিলিয়ে, কিরণ বেদির এই মন্তব্য দেশের নিরাপত্তা নীতি নিয়ে নতুন আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। নাগরিক–কেন্দ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করতে হলে কীভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়, এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি কীভাবে তৃণমূল পর্যায়ে বিশ্বাস ও সহযোগিতা বাড়াতে পারে—এর ওপর আগামী দিনে জোর দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular