ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা সি আর কেশবন মঙ্গলবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের (kharge) একটি দাবির তীব্র নিন্দা করেছেন। খড়গে অভিযোগ করেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার তিন দিন আগে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়েছিলেন। কেশবন এই বক্তব্যকে “বিশ্বাসঘাতক” আখ্যা দিয়ে খড়গের কাছে “নিঃশর্ত ক্ষমা” দাবি করেছেন।
ভিডিও বার্তায় কেশবন বলেন
নিজের তৈরি একটি ভিডিও বার্তায় কেশবন বলেন, “মল্লিকার্জুন খড়গে (kharge) আধুনিক যুগের মীর জাফরের মতো বিশ্বাসঘাতক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর বিষাক্ত, ভিত্তিহীন, অপ্রমাণিত আক্রমণ অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত। খড়গের এই মন্তব্য ক্ষমার অযোগ্য, অরক্ষণীয় এবং ক্ষমা করা যায় না। সকলেই তাঁর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি করছে, এবং তাঁকে এও স্পষ্ট করতে হবে যে এই ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য তিনি কী ধরনের তথ্য পেয়েছেন।”
শেহজাদ পুনাওয়ালা অভিযোগ করেছেন
এছাড়াও, বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা অভিযোগ করেছেন যে কংগ্রেস আবারও “ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি” শুরু করেছে। তিনি বলেন, “ভারতে কিছু পাকিস্তানি ইউটিউবার নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে কংগ্রেসের সকল নেতা পাকিস্তানের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করেছেন।
আমরা দেখলাম, চরণজিৎ সিং চান্নি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সেনাবাহিনীর মনোবলের উপর আঘাত করেছেন। সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেস নেতারা বলেন, তারা দেশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু বৈঠক থেকে বেরিয়েই তারা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি শুরু করে।”
প্যান কার্ডেই এক ক্লিকে মিলবে ৫ লাখ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ
খড়গের অভিযোগ (kharge)
এর আগে একই দিনে, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এ ২২ এপ্রিল সংঘটিত জঙ্গি হামলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে ‘সংবিধান বাঁচাও’ সমাবেশে বক্তৃতাকালে খড়গে প্রশ্ন করেন, পূর্ব সতর্কতা সত্ত্বেও কেন কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমালোচনা করে বলেন, তিনি একই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাশ্মীর সফর বাতিল করলেও সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি।
খড়গে বলেন (kharge), “২২ এপ্রিল দেশে একটি বড় জঙ্গি হামলা হয়, যাতে ৬২ জন মানুষ নিহত হন। এটি ছিল গোয়েন্দা ব্যর্থতা; সরকার এটি স্বীকার করেছে এবং বলেছে তারা এটি সমাধান করবে। কিন্তু যদি তারা এটি সম্পর্কে অবগত ছিল, তাহলে কেন কিছুই করা হয়নি?” তিনি আরও বলেন, “আমি তথ্য পেয়েছি যে হামলার তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল, এবং তার ভিত্তিতে তিনি কাশ্মীর সফরের কর্মসূচি বাতিল করেছিলেন।
আমি এটি একটি সংবাদপত্রেও পড়েছি। যদি গোয়েন্দা তথ্য সতর্ক করে যে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) জন্য সেখানে যাওয়া নিরাপদ নয়, তাহলে পর্যটক এবং সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়নি?”
খড়গে স্পষ্ট করেন
খড়গে (kharge) স্পষ্ট করেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর সিদ্ধান্তই নেবে, কংগ্রেস তাতে সরকারের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই বলেছি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সরকারের সঙ্গে থাকব। কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। দেশ সর্বাগ্রে; বাকি সব গৌণ। আমরা এই জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি।”
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। হামলাটি দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করে, যা লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) একটি প্রক্সি এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের একটি মুখোশ। এই ঘটনার পর ভারত সরকার পাকিস্তানকে কঠোর বার্তা দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ১৯৬০ সালের ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও রয়েছে।
বিজেপি নেতা কেশবনের মতে, খড়গের (kharge) বক্তব্য সুরক্ষা বাহিনীর মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই সময়ে যখন সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই একটি সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে রয়েছে, খড়গের এই মন্তব্য দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সমান।” তিনি খড়গের কাছে প্রমাণ উপস্থাপন বা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান।
কংগ্রেসের মধ্যে বিতর্ক
এদিকে, খড়গের (kharge) বক্তব্য কংগ্রেসের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই তাদের নেতাদের পহেলগাঁও হামলা নিয়ে দলীয় অবস্থানের বাইরে মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছে। কংগ্রেসের যোগাযোগ প্রধান জয়রাম রমেশ এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “পহেলগাঁও ইস্যুতে শুধুমাত্র মল্লিকার্জুন খড়গে, রাহুল গান্ধী এবং অনুমোদিত এআইসিসি পদাধিকারীদের মতামতই দলের অফিসিয়াল অবস্থান।”
ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে তীব্র বিতর্ক
পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলো জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে পাকিস্তানের বক্তব্যকে সমর্থন করছে। বিজেপি সাংসদ রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, “রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়গে সরকারের প্রতি সমর্থন জানালেও তাদের দলের কিছু নেতার মন্তব্য পাকিস্তান কর্তৃক ভারতকে দুর্বল হিসেবে চিত্রিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপে সমর্থনের অভিযোগের মুখে ভারত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের ‘মিথ্যা পতাকা’ বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, এবং ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।
খড়গের (kharge) বক্তব্য এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়। একদিকে কংগ্রেস জাতীয় সংহতির কথা বলছে, অন্যদিকে বিজেপি তাদের বক্তব্যকে দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করছে। এই পরিস্থিতি অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।