কেরল: কেরলের কোচির একটি বেসরকারি স্কুলে হিজাব পরা নিয়ে বড় বিতর্কের জেরে সোমবার এবং মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটে পাল্লুরুথি এলাকার সেন্ট রিটা পাবলিক স্কুলে, যেখানে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে হিজাব পরে ক্লাসে ঢুকতে না দেওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্রমে বিষয়টি ধর্মীয় সংবেদনশীলতা, রাজনীতি এবং শিক্ষা নীতির সংমিশ্রণে এক বৃহৎ আলোচনার রূপ নেয়।
সূত্র অনুযায়ী, ওই ছাত্রী গত চার মাস ধরে স্কুলের নির্ধারিত ইউনিফর্মেই ক্লাসে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই মাসের শুরুতে তিনি প্রথমবার হিজাব পরে স্কুলে যান। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের ইউনিফর্ম নীতিতে হিজাব পরা অনুমোদিত নয়, তাই তাকে “ভালোভাবে অনুরোধ করে” হিজাব খুলে ক্লাসে যেতে বলা হয়।
১৪০০ বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে এই ৪ ব্যাবসায়িক সংস্থা
প্রধান শিক্ষক সিস্টার হেলিনা আলবি বলেন, “আমরা মেয়েটিকে খুব শান্তভাবে অনুরোধ করেছিলাম যাতে সে স্কুলের নিয়ম মেনে চলে, এবং প্রথম দিন সে তাতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন তার মা স্কুলে এসে আপত্তি জানান।”
এরপর ১০ অক্টোবর ছাত্রীর বাবা আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসেন এবং গেটে বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, ওই সময় তাঁরা লাইভ ভিডিও করেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে ক্লাস চলাকালীন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে।
ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে স্কুল প্রশাসন ১৩ ও ১৪ অক্টোবর দুই দিনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি চিঠিতে প্রিন্সিপাল লেখেন, “ছাত্রী ও তার পরিবারের চাপ, এবং স্কুলের বাইরের কিছু ব্যক্তির অনধিকার হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। তাই অস্থায়ীভাবে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৯৮ সাল থেকে এই স্কুল চালু আছে, কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা মানসম্মত শিক্ষা দিতে চাই, কিন্তু শৃঙ্খলা ও নিয়ম মানা প্রত্যেকের কর্তব্য।” ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় ওঠে। কেরল বিজেপি সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর বলেন, “এই ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত এবং দুঃখজনক। এটি কেরলের সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পরীক্ষার মুখে ফেলছে।”
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা শোন জর্জ অভিযোগ করেন, “এই ঘটনায় এসডিপিআই কর্মীরা স্কুলে ঢুকে অশান্তি তৈরি করেছে। প্রায় ১১৭ জন মুসলিম ছাত্রী এই স্কুলে পড়ে, কিন্তু কেউ নিয়ম ভাঙেনি। তবু এক শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে অযথা রাজনীতি হচ্ছে।”
অন্যদিকে, কেরল শিক্ষা মন্ত্রী ভি. শিবনকুটি স্পষ্ট করে জানান, “প্রতিটি স্কুলের নিজস্ব ইউনিফর্ম নিয়ম আছে। সব ছাত্রছাত্রীকে তা মেনে চলতে হবে। যা ইউনিফর্মকে ঢেকে দেয়, তা গ্রহণযোগ্য নয়। অভিভাবক ও ছাত্রদের স্কুলের নিয়মে সহযোগিতা করা উচিত।”
যদিও বিষয়টি ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়াতে পারত, শেষমেশ তা মীমাংসার পথে যায়। এরনাকুলামের সাংসদ হিবি ইডেন মঙ্গলবার জানান, ছাত্রীর বাবা আনাস স্কুলের নিয়ম মেনে মেয়েকে একই স্কুলে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “অভিভাবক নিজেই জানিয়েছেন যে তিনি স্কুলের নিয়ম মেনে মেয়েকে পড়াতে চান। এই সিদ্ধান্ত কেরলের সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।”
অন্যদিকে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে যে, বিজেপি ও আরএসএস বিষয়টিকে “রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করতে চেয়েছিল।” কংগ্রেস নেতাদের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা গেছে।
এখন স্কুলে শান্ত পরিবেশ ফিরছে, এবং ক্লাস চালুর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। কেরলের এই ঘটনার শিক্ষা হলো ধর্মীয় বিশ্বাস, স্কুলের শৃঙ্খলা ও সামাজিক সম্প্রীতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই আজকের চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞান ও সহিষ্ণুতার বিকাশ, বিভেদের নয়।
