স্কুল জীবনে লাস্ট বেঞ্চের স্মৃতি নেই এমন মানুষ কম ই আছে (Kerala)। বরং বলা ভাল স্কুলের কিছু স্মৃতি তৈরী হয় লাস্ট বেঞ্চে। বিশেষ করে মাস্টারমশাইদের লুকিয়ে কচিকাঁচাদের লাস্ট বেঁচে বসে গল্প স্কুল জীবনের এক মধুর অধ্যায়। এই লাস্ট বেঞ্চ কে কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে কালজয়ী সাহিত্য ও । কিন্তু এই লাস্ট বেঞ্চের কিছু দুর্নাম ও আছে। বেশির ভাগের ই ধারণা লাস্ট বেঞ্চাররা সকলের থেকে একটু পিছিয়ে থাকে।
তার সাথে এও দেখা গেছে লাস্ট বেঞ্চের ছাত্রদের দিকে মনোযোগ কম থাকে মাস্টারমশাইদের ও। আবার কখন ও বিভিন্ন কারণে লাস্ট বেঞ্চারদের হেয় প্রতিপন্ন করে তথাকথিত প্রথম দিকে বসা ছাত্ররা। এই প্রচলিত মানসিকতা বছরের পর বছর ধরে গেঁথে আছে স্কুলের ছাত্র এবং সেই সাথে মাস্টারমশাইদের মধ্যে। ঠিক এই কারণেই কেরলের (Kerala) শিক্ষা ব্যবস্থায় আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এবার নির্মাণ হবে ক্রিয়েটিভ ক্লাস ঘর। থাকবেনা তথাকথিত লাস্ট বেঞ্চের ধারণা।
কেরলের (Kerala) একটি স্কুল তাদের উদ্ভাবনী ক্লাসরুম আসন বিন্যাসের মাধ্যমে লাস্ট বেঞ্চের ধারণাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।কোল্লাম জেলার ভালাকমে অবস্থিত রামবিলাসম ভোকেশনাল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল (আরভিএইচএসএস) এই পথপ্রদর্শক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছে।
২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া মালয়ালম চলচ্চিত্র ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-এর একটি দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই স্কুল ক্লাসরুমে ইউ-আকৃতির বা অর্ধবৃত্তাকার আসন বিন্যাস প্রবর্তন করেছে। এই ব্যবস্থায় শিক্ষক ক্লাসের মাঝখানে দাঁড়ান, আর ছাত্রছাত্রীরা চার দেওয়ালের সঙ্গে একক সারিতে বসে।
ফলে কেউ পিছনে থাকে না, সবাই যেন ‘ফ্রন্ট বেঞ্চার’ হয়ে ওঠে। এই মডেল কেরলের আটটি স্কুল এবং পাঞ্জাবের একটি স্কুলে ইতিমধ্যে গৃহীত হয়েছে, এবং এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
উদ্ভাবনের পেছনের গল্প
‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ চলচ্চিত্রে শ্রীকুট্টন নামে এক লাস্ট বেঞ্চার ছাত্রের গল্প দেখানো হয়েছে, যিনি পিছনের সারিতে বসার জন্য অপমানিত হন। ছবির শেষে তিনি ইউ-আকৃতির আসন বিন্যাসের প্রস্তাব দেন, যা স্কুল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে।
চলচ্চিত্রের পরিচালক ভিনেশ বিশ্বনাথ জানিয়েছেন, এই ধারণা ১৯৯৪ সালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে কিছু স্কুলে প্রচলিত ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, “পিছনের সারিতে বসার জন্য অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই এই ধারণা এসেছে।”
নতুন বিন্যাসের সুবিধা
এই ইউ-আকৃতির বিন্যাসে ক্লাসরুমের (Kerala) চার দেওয়ালের সঙ্গে একক সারিতে বেঞ্চ সাজানো হয়। শিক্ষক ক্লাসের মাঝখানে থাকায় প্রত্যেক ছাত্রের সঙ্গে সরাসরি চোখের যোগাযোগ হয়। আরভিএইচএসএস-এর প্রধান শিক্ষক সুনীল পি শেখর জানিয়েছেন, “এই ব্যবস্থা শিক্ষকদের সব ছাত্রের প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দেয়। ক্লাসে শৃঙ্খলা ও মনোযোগ বেড়েছে।” শিক্ষিকা মীরা, যিনি ২৯ বছর ধরে পড়াচ্ছেন, বলেন, “এই বিন্যাস ঐতিহ্যবাহী বিন্যাসের তুলনায় অনেক বেশি ফলপ্রদ। ছাত্রদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ে।”
জাতীয় প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই উদ্যোগ জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিল্পপতি আনন্দ মহিন্দ্রা এক্স-এ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এটি একটি দারুণ উদ্যোগ, যদিও লাস্ট বেঞ্চের স্মৃতি আমার কাছে প্রিয়।” সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কেউ কেউ এটিকে সমতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য আদর্শ বলেছেন, আবার কেউ কেউ লাস্ট বেঞ্চের সৃজনশীল স্বাধীনতা হারানোর জন্য হাস্যরসাত্মক আক্ষেপ করেছেন। শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা মজা করে বলেছেন, “কেরলে পড়লে আমার গোপন ঘুম আর সামোসা খাওয়ার জায়গা কোথায় থাকত?”
রণক্ষেত্র বিহার! ভোটের আগে খুন ৩,আরজেডিকে নিশানা নীতীশ শিবিরের
অন্যান্য রাজ্যে প্রসার
কেরলের (Kerala) এই মডেল অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। পাঞ্জাবের একটি স্কুল এবং মালদার বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এই বিন্যাস গ্রহণ করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের শিক্ষামন্ত্রী সাকিনা ইত্তু জানিয়েছেন, তারা এই মডেল পরীক্ষা করে দেখবেন। কেরলের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আমরুথ জি কুমার বলেছেন, এই বিন্যাস ফিনল্যান্ডের মতো শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
তবে, বড় ক্লাসে এটি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেরলের এই ক্রিয়েটিভ ক্লাসরুম মডেল লাস্ট বেঞ্চের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে শিক্ষায় সমতা ও অংশগ্রহণের নতুন দিগন্ত খুলেছে। ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া এবং সমান মনোযোগের এই উদ্যোগ ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।