Sunday, December 7, 2025
HomeBharatছত্তিসগড়ে খ্রিস্ট ধর্ম ছেড়ে ফের হিন্দু ধর্মে ফেরত ৬ পরিবারের

ছত্তিসগড়ে খ্রিস্ট ধর্ম ছেড়ে ফের হিন্দু ধর্মে ফেরত ৬ পরিবারের

- Advertisement -

ছত্তিসগড় ৭ ডিসেম্বর: ছত্তিসগড়ের কানকের জেলায় আবার সামনে এল অন্য ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার ঘটনা (Kanker Ghar Wapsi 30 people)। স্থানীয় সূত্র ও প্রশাসনিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, জেলার অন্তর্গত একটি গ্রামাঞ্চলে একইসঙ্গে ৬টি পরিবারের মোট ৩০ জন মানুষ খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরে এসেছেন। স্থানীয়ভাবে এই প্রক্রিয়াকে ‘ঘর ওয়াপসি’ বলা হয়। শনিবার অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রাম্য পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয় সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা।

পরিবারগুলির সদস্যদের দাবি বহু বছর আগে তাঁরা নানা সামাজিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের কথায়, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে ভিন্ন বিশ্বাসকে বেছে নেওয়াই তাঁদের কাছে আশার আলো মনে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, জীবনযাত্রার মূল সংকট বা পারিবারিক সমস্যা থেকে মুক্তির কোনো বাস্তব পরিবর্তন তাঁরা দেখেননি। তাই দীর্ঘ চিন্তাভাবনার পর তাঁরা আবার তাঁদের “মূ্ল ধর্মীয় পরিচয়ে” ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

   

হাসপাতালে ভর্তি নচিকেতা, বাতিল সমস্ত কনসার্ট

এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় স্থানীয় মন্দির প্রাঙ্গণে, যেখানে পুরোহিতদের উপস্থিতিতে পরিবারগুলির পুনরায় শুদ্ধিকরণ ও সংস্কারমূলক কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, ফিরতি অনুষ্ঠানে বিশেষ যজ্ঞ, সঙ্কল্প পাঠ, প্রণাম এবং সম্মিলিত শুভেচ্ছা বিনিময়ের মতো রীতি পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে পরিবারগুলিকে নতুন করে পরিচয়পত্র, মালা, চন্দন ও প্রসাদ দেওয়া হয়।

স্থানীয় প্রশাসন জানায় ইচ্ছাকৃত এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এই হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া হয়েছে যে এ সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো জোরজবরদস্তি বা চাপ নেই। তবে এ বিষয়ে সরকারি পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

গ্রামের এক নারী, যিনি এই ধর্মফেরার অংশ ছিলেন, বলেন, “আমরা কোনও বিরোধ বা প্রভাবের কারণে সিদ্ধান্ত নিইনি। বহুদিন ধরেই মনে হচ্ছিল আমাদের জন্মপরিচয়েই ফিরে যাওয়া উচিত। সেই পথেই ফিরলাম।” আরেকজন বলেন, “যে সমস্যার ভরসায় আমরা ধর্মান্তর হয়েছিলাম, সেগুলি থেকে মুক্তি পাইনি। তাই ভাবলাম ঘরে ফিরে যাই।”

স্থানীয় সংগঠনগুলির দাবি, ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি পরিবার একইভাবে ফিরতে পারে। তাঁদের বক্তব্য—“অনেকেই নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন। কেউ চাইলে আমরা তাঁদের সহায়তা করব, তবে সিদ্ধান্ত একান্তই ব্যক্তিগত।” তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, যে কোনো ধর্মীয় সিদ্ধান্তই আইন ও সংবিধানের সীমার মধ্যে থেকেই গ্রহণ করতে হবে।

ধর্মান্তর বা ধর্মফেরা—দুই ক্ষেত্রেই ছত্তিসগড়ে প্রশাসনের নজরদারি কড়া। বেশ কিছু জেলায় অতীতে অনিয়ম বা অভিযোগ উঠেছিল, তাই এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিটি ধাপেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করছে। কানকেরে এই বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনও বড় কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র মতামত পাওয়া গেছে। কেউ এটিকে ব্যক্তিগত অধিকার হিসেবে দেখছেন, কেউ আবার সামাজিক পরিবর্তনের অংশ বলে মনে করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিচয়গত চাপের মধ্যেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত গড়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক অসুবিধা, পারিবারিক দোটানা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা সব মিলিয়েই মানুষ ধর্মীয় পরিচয়ে পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবেন।

আবার পরিস্থিতি পাল্টালে তাঁদের মধ্যে পুনরায় ফিরে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। এই মুহূর্তে ৩০ জনের ‘ঘর ওয়াপসি’ ঘটনাটি কানকেরের গ্রামীণ পরিবেশে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি শিগগিরই আরও পরিবার এ পথে হাঁটতে পারে, তবে প্রশাসন বলছে, তারা প্রতিটি আবেদন ও পদক্ষেপ আলাদাভাবে যাচাই করে তবেই অনুমতি দেবে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular