ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশন সিঁদুর পাকিস্তানের গভীরে অবস্থিত নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ১৯৯৯ সালের কান্দাহার (kandahar) বিমান ছিনতাইয়ের ক্ষত কিছুটা হলেও প্রশমিত করেছে। এই অভিযানে জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম), লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিদের মধ্যে কুখ্যাত রউফ আসগর, কান্দাহার ঘটনার অন্যতম মূল চক্রী, নিহত হয়েছে। পাহালগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত এই অভিযানে ১০০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
কান্দাহারের ক্ষত ও রউফের ভূমিকা (kandahar)
১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আইসি-৮১৪ কান্দাহারে (kandahar) ছিনতাই হয়। রউফ আসগর এই ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিল। ছিনতাইকারীরা জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মাসুদ আজহারসহ তিন জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়। ভারত সে সময় তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়, যা জাতির জন্য একটি বড় ক্ষত হিসেবে রয়ে যায়। রউফের নিহত হওয়া এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অপারেশন সিঁদুর বিবরণ
৭ মে ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওজেকে) নির্ভুল হামলা চালায়। এই অভিযানে চারটি জঙ্গি ঘাঁটি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, সরজাল এবং মেহমুনা জয়ায় এবং পাঁচটি পিওজেকের ভিম্বরে মারকাজ আহলে হাদিস বারনালা, কোটলিতে মারকাজ আব্বাস ও মাসকার রাহিল শহীদ, মুজাফফরাবাদে শাওয়াই নাল্লাহ ক্যাম্প এবং মারকাজ সৈয়দনা বিলালে ধ্বংস করা হয়।
এই হামলায় হারপি ড্রোন ব্যবহার করা হয়, যা শত্রুর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দমন (SEAD) ভূমিকার জন্য ডিজাইন করা। হারপি ড্রোন উচ্চ-বিস্ফোরক ওয়ারহেড এবং এন্টি-রেডিয়েশন সিকার দিয়ে সজ্জিত, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাডার সিস্টেম সনাক্ত করে ধ্বংস করে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই অভিযানে লাহোরে অবস্থিত পাকিস্তানের একটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
হারপি ড্রোন ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত গভীর হামলা মিশনে কাজ করতে সক্ষম, যা দিন-রাত, সব আবহাওয়ায় এবং গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (GNSS) বাধাগ্রস্ত পরিস্থিতিতেও কার্যকর। অপারেশন চলমান থাকায় নিহত সন্ত্রাসীদের সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে, রউফ আসগরের নিহত হওয়া ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য।
পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
অপারেশন (kandahar) সিন্দুরের জবাবে পাকিস্তান ৭ মে রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের আওয়ান্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কপুরথালা, জলন্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, ভাটিন্ডা, চণ্ডীগড়, নাল, ফালোদি, উত্তরলাই এবং ভুজে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলার চেষ্টা করে। ভারতের ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এই হামলা প্রতিহত করে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এস-৪০০ সুদর্শন চক্র ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ভারতের দিকে আগত লক্ষ্যবস্তুগুলো নিষ্ক্রিয় করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযানে সমস্ত লক্ষ্য সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। হামলার ধ্বংসাবশেষ বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে, যা পাকিস্তানের আক্রমণের প্রমাণ বহন করে।
পাক এয়ার ডিফেন্স গুড়িয়ে দিতে ব্যবহার হচ্ছে শক্তিশালী হারপি ড্রোন
ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
৮ মে সকালে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের একাধিক এয়ার ডিফেন্স রাডার এবং সিস্টেমে হামলা চালায়। হারপি ড্রোন ব্যবহার করে লাহোরের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করা হয়। ভারতের এই প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের হামলার সমান তীব্রতায় এবং একই ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, এই হামলাগুলো জঙ্গি পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীভূত এবং কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি।
এলওসি-তে উত্তেজনা
পাকিস্তান লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উড়ি, পুঞ্চ, মেন্ধর এবং রাজৌরি সেক্টরে মর্টার এবং ভারী ক্যালিবার আর্টিলারি ব্যবহার করে অযাচিত গোলাগুলি বাড়িয়েছে। এতে ১৬ জন নিরীহ মানুষ, যার মধ্যে তিনজন মহিলা এবং পাঁচজন শিশু, প্রাণ হারিয়েছে। পাকিস্তানের এই গোলাগুলি বন্ধ করতে ভারত পাল্টা হামলা চালায়(kandahar)। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী উত্তেজনা বৃদ্ধি না করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, তবে এটি পাকিস্তানের দ্বারা সম্মানিত হওয়া উচিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই সংঘাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামরিক সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। চীন, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত শান্তি আলোচনার সমর্থন করেছে।
ভারতের অবস্থান
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপারেশন সিঁদুর জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংসের জন্য পরিচালিত হয়েছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, “ভারত তার মাটিতে হামলার যথাযথ জবাব দেবে।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অপারেশনকে জাতির গর্বের মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রউফ আসগরের (kandahar) নিহত হওয়ায় কান্দাহারের ক্ষত কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে । অপারেশন সিন্দুর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রমাণ। তবে, এলওসি-তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উভয় পক্ষের সংযমের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।