দিঘা ‘জগন্নাথ ধাম’ বিতর্কে কড়া প্রতিক্রিয়া কলিঙ্গ মন্ত্রীর

দিঘায় (digha) নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের নামকরণ এবং এর পরিচিতি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে এবং তা ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক মহলে ও । ওড়িশার আইন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক…

digha jagannath temple contfoversy

দিঘায় (digha) নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের নামকরণ এবং এর পরিচিতি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে এবং তা ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক মহলে ও । ওড়িশার আইন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হিন্দু সংস্কৃতিতে ভারতের চারটি ধামের মধ্যে পুরীর জগন্নাথ মন্দির সর্বপ্রধান।

অন্য কোনো মন্দির এই নাম ব্যবহার করে নিজেকে “দ্বিতীয় জগন্নাথ ধাম” হিসেবে দাবি করতে পারে না, কারণ এটি আইনগতভাবে এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিতর্ক দিঘার মন্দিরের নামকরণ এবং এর প্রচারের কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যা ওড়িশার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকে স্পর্শ করেছে।

   

মন্ত্রীর বক্তব্য

ওড়িশার মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন, যিনি বিজেপি’র একজন প্রভাবশালী নেতা, স্পষ্টভাবে বলেছেন, “হিন্দু সংস্কৃতিতে ভারতে চারটি ধাম রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান ধাম হলো পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির। অন্য কোনো মন্দির এই নাম ব্যবহার করে নিজেকে দ্বিতীয় জগন্নাথ ধাম হিসেবে দাবি করতে পারে না। এটি আইনগতভাবে এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের একটি ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে, যা অন্য কোনো মন্দির দ্বারা প্রতিস্থাপিত বা পুনরাবৃত্তি করা যায় না। তিনি দিঘার মন্দির কর্তৃপক্ষকে এই নাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রেক্ষাপট (digha)

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্রতীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় (digha) সম্প্রতি একটি নতুন জগন্নাথ মন্দির নির্মিত হয়েছে। এই মন্দিরটি দিঘার পর্যটন আকর্ষণ বাড়াতে এবং স্থানীয় ও পর্যটকদের জন্য একটি ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

মন্দিরটি (digha) পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিরূপ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, এবং কিছু প্রচারণায় এটিকে “দ্বিতীয় জগন্নাথ ধাম” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নামকরণ এবং প্রচারণা ওড়িশার জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

পুরীর জগন্নাথ মন্দির (digha) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান এবং ভারতের চার ধামের (বদ্রীনাথ, দ্বারকা, পুরী এবং রামেশ্বরম) অন্যতম। এই মন্দিরের ধর্মীয় তাৎপর্য এবং ঐতিহ্য শতাব্দী প্রাচীন। ওড়িশার জনগণ এই মন্দিরকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তাই দিঘার মন্দিরের নামকরণ এবং এর প্রচারণা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে বলে অনেকে মনে করছেন।

হায়দ্রাবাদের পাকিস্তানিদের ফেরানোর দাবিতে চারমিনারে বিজেপির বিক্ষোভ

ওড়িশার প্রতিক্রিয়া

পৃথ্বীরাজ হরিচন্দনের বক্তব্য ওড়িশার জনগণের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে তাঁর অবস্থানের প্রশংসা করেছেন এবং দিঘার মন্দিরের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। ওড়িশার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং স্থানীয় নেতারা এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নাম এবং পরিচিতি অনন্য, এবং অন্য কোনো মন্দির এটির সঙ্গে তুলনা করার অধিকার রাখে না। কেউ কেউ এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের হুমকিও দিয়েছেন।

ওড়িশার কিছু বাসিন্দা এবং ধর্মীয় নেতারা দাবি করেছেন যে দিঘার মন্দিরের নামকরণ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পবিত্রতা এবং তাৎপর্যকে হ্রাস করছে। তারা বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি নামের বিষয় নয়, বরং ওড়িশার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান।

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিক্রিয়া

দিঘার (digha) মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও এই বিতর্কের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মন্দিরটি পর্যটন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে এবং এর নামকরণে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না।

মন্দিরটি দিঘার (digha) সৌন্দর্য এবং ধর্মীয় পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিছু স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটক মনে করেন, এই বিতর্ক অপ্রয়োজনীয় এবং এটি দুই রাজ্যের মধ্যে সম্পর্কে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

পশ্চিমবঙ্গের কিছু রাজনৈতিক নেতা বলেছেন, মন্দিরের নামকরণ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। তারা উভয় রাজ্যের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন।

আইনি ও নৈতিক দিক

পৃথ্বীরাজ হরিচন্দনের বক্তব্যে আইনি এবং নৈতিক দিকগুলো গুরুত্ব পেয়েছে। ভারতের আইন অনুযায়ী, কোনো ধর্মীয় স্থানের নামকরণ বা প্রচারণা যদি অন্য কোনো ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা বা পরিচিতিকে ক্ষুণ্ণ করে, তাহলে তা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। ওড়িশার কিছু আইনজ্ঞ মনে করেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নাম এবং পরিচিতি একটি সাংস্কৃতিক সম্পদ, যা সুরক্ষিত করা উচিত।

দিঘা জগন্নাথ মন্দির বিতর্ক ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। ওড়িশার মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দনের বক্তব্য পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের প্রতি তাদের অটল অবস্থানকে তুলে ধরেছে।

অন্যদিকে, দিঘার মন্দিরটি পর্যটন এবং স্থানীয় ধর্মীয় পরিবেশের উন্নয়নের জন্য নির্মিত হয়েছে। এই বিতর্ক সমাধানের জন্য উভয় রাজ্যের মধ্যে সংলাপ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রয়োজন। ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান বজায় রেখে এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানই সব পক্ষের জন্য উপকারী হবে।