জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর মুখে ফুটে উঠল গভীর হতাশার সুর। একসময়ের দেশের শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত উপত্যকার অবস্থা এখন বেশ নড়বড়ে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলা, সীমান্তে সংঘর্ষ, এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জর্জরিত ভূস্বর্গের পর্যটন শিল্প আজ বড় সংকটে।
ওমর আবদুল্লাহ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই বছরটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল। প্রথমে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা, তারপর ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ। এরপর জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে ভয়াবহ বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে। পর্যটন শিল্প কার্যত থমকে গেছে।”
দিওয়ালির আগে কর্মীদের বড় উপহার! PF-এর পূর্ণ উত্তোলনে EPFO’র অনুমতি
কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল স্তম্ভই পর্যটন। প্রতি বছর লাখো দেশি-বিদেশি পর্যটক উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। কিন্তু এ বছর সেই ছবিটা একেবারেই বদলে গেছে। নিরাপত্তা আশঙ্কা, আবহাওয়ার বিপর্যয়, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হোটেল বুকিং, ট্রাভেল এজেন্সি, হাউসবোট ব্যবসা—সবকিছুতেই এসেছে মন্দা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বহু বুকিং বাতিল হয়েছে, পর্যটকদের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
তবুও মুখ্যমন্ত্রী আশার আলো দেখতে চান। তিনি জানান, “আমরা হাল ছাড়িনি। পর্যটন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের একটি দল সিঙ্গাপুরে রয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যটনের বিশাল বাজার, আমরা সেই বাজার ধরার চেষ্টা করছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, কলকাতা এবং আহমেদাবাদেও কাশ্মীর পর্যটনের প্রচার চালাচ্ছি।”
ওমর আবদুল্লাহ মনে করেন, নতুন আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং উন্নত পরিকাঠামোর মাধ্যমে কাশ্মীরের পর্যটন ফের আগের জায়গায় ফিরবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা একযোগে কাজ করলে আগামী বছরেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
তবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু প্রচারণা যথেষ্ট নয়—প্রথমে প্রয়োজন স্থিতিশীলতা ও আস্থার পরিবেশ তৈরি করা। পর্যটকরা যতদিন নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব না করবেন, ততদিন উপত্যকায় পর্যটনের স্বর্ণযুগ ফিরে আসা কঠিন।
কাশ্মীরের হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মির ইমরান বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটক আগমন প্রায় ৬০ শতাংশ কম। বহু ছোট হোটেল বন্ধের মুখে। সরকার যদি ক্ষতিপূরণ ও প্রণোদনা না দেয়, তাহলে আগামী মৌসুমে আরও বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।”
এদিকে স্থানীয় যুবক-যুবতীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। পর্যটন খাতে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়—গাইড, ড্রাইভার, ফটোগ্রাফার, হস্তশিল্প বিক্রেতা, হোটেল কর্মচারী—সবাই এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবুও আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কাশ্মীরের সৌন্দর্য কখনও ম্লান হয় না। কঠিন সময় কেটে যাবে, আবারও সারা বিশ্বের মানুষ উপত্যকায় আসবেন—এই বিশ্বাসই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”