জম্মু-কাশ্মীরে পাক-জঙ্গি অনুপ্রবেশের হাই অ্যালার্টে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu Kashmir) নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে৷ কারণ তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা ঠেকানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরে…

Jammu and Kashmir on High Alert to Prevent Terrorist Infiltration

জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu Kashmir) নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে৷ কারণ তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা ঠেকানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠনগুলির সমর্থনে যে সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সমাবেশের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যকলাপ পুনরায় উস্কে দেওয়া হয়েছে এবং জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের জন্য জঙ্গিরা প্রস্তুত হচ্ছে।

ইন্টেলিজেন্স সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত এলাকা, বিশেষ করে লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC) ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, পাকিস্তানের নীলাম ভ্যালি ও ফুরকিয়ান গালি, কৃষ্ণাঘাটির এলাকা থেকে কমপক্ষে ১৫০ জন প্রশিক্ষিত জঙ্গি অনুপ্রবেশের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই জঙ্গি দলগুলো কাশ্মীর সলিডারিটি ডে উপলক্ষে PoK-তে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে উৎসাহিত হয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা করছে।

   

সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়ে ভারতীয় সেনা পোস্টগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করতে পারে। ইতোমধ্যেই ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে একটি শক্তিশালী ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট এসেছে, যাতে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা শুধুমাত্র অনুপ্রবেশ করবে না, বরং সীমান্তের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্যও তারা সক্রিয় থাকবে।

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ এবং তার সহায়ক পরিবেশ দমন করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী অনেক সফলতা অর্জন করেছে, এবং এ কারণেই পাকিস্তান বর্তমানে নানা পরিকল্পনা পরিবর্তন করছে। তবে ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, বর্তমানে জঙ্গিরা আর জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের প্রভাব স্থাপন করতে পারবে না।

জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি দমনের জন্য ইতোমধ্যে একটি ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। কাশ্মীরের পুলিশ মহাপরিদর্শক (IGP) ভি.কে. বীরদি জানিয়েছেন, কেবল শ্রীনগর নয়, কাশ্মীরের অন্যান্য দূরবর্তী জেলা এবং শহরগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় মাল্টি-টিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, চেকপোস্ট, এবং এলাকায় প্রবেশকারী গাড়ি এবং ব্যক্তিদের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে।

এছাড়া, বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তি এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। শহর এবং গ্রামের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে, যা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ একাধিক বৈঠক করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে জম্মু ও শ্রীনগরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

সেনাবাহিনী, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন, এবং আধাসামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে, জঙ্গি কার্যকলাপ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট গভর্নর সিনহা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, জঙ্গি কার্যকলাপ দমন করতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট গভর্নর সিনহা আরও বলেছেন, যারা জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেয় বা তাদের সহায়তা করে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। জঙ্গি মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, নতুন ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টের ভিত্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের জঙ্গি সমস্যা মোকাবিলায় একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এই কৌশলটি মূলত সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধে এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে, জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমের ফলে জঙ্গি কার্যকলাপ অনেকটাই কমে গেছে। তবে, পাকিস্তান এবং তার মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো কখনোই তাদের লক্ষ্য ত্যাগ করে না। ফলে, জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনী নিরলসভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনী এই মুহূর্তে জঙ্গি কার্যকলাপ ঠেকানোর জন্য সশস্ত্র এবং প্রস্তুত রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, জঙ্গি কার্যকলাপের বিস্তার রোধ করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ভারতীয় সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রয়েছে যে, জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিতে পারবে না।