‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শীঘ্রই সম্পন্ন হবে’: জয়শঙ্কর

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোহান ডেভিড ওয়াডেফুলের (EU India Free Trade) সঙ্গে একটি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর জানিয়েছেন যে, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন…

EU India Free Trade

ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোহান ডেভিড ওয়াডেফুলের (EU India Free Trade) সঙ্গে একটি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর জানিয়েছেন যে, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনাকে শীঘ্রই একটি “নির্ণায়ক সমাপ্তি”র দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

এই বৈঠকটি নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জয়শঙ্কর জার্মানির সমর্থনের উপর ভরসা প্রকাশ করেছেন এই চুক্তির আলোচনাকে ত্বরান্বিত করতে। তিনি বলেন, “আমরা আপনার সমর্থনের উপর ভরসা করছি যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করা যায় এবং এফটিএ আলোচনাকেএগিয়ে যে যাওয়া যায়। ভারত এবং জার্মানির মধ্যে বহুপাক্ষিক সহযোগিতার একটি শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে, যা আমি নিশ্চিত, আজকের আলোচনার মাধ্যমে আরও এগিয়ে যাবে।”

   

জার্মান বিদেশমন্ত্রী ওয়াডেফুল, যিনি চলতি বছর জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সরকার গঠনের পর প্রথমবার ভারত সফরে এসেছেন, এই চুক্তির প্রতি জার্মানির পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “জার্মানি এই চুক্তিটি যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করার জন্য পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। আমরা একটি মুক্ত বাণিজ্য জাতি… ইইউ-এর ভারতের সঙ্গে এই চুক্তিটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমি আশা করি আমরা সফল হব।” তিনি আরও জানান, জার্মানি ইউরোপীয় কমিশনের কাছে তাদের প্রভাব ব্যবহার করে এই এফটিএ-কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করবে।

এই বৈঠকে ভারত ও জার্মানির মধ্যে ২৫ বছরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব, ৫০ বছরের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা এবং প্রায় ৬০ বছরের সাংস্কৃতিক চুক্তির মাইলফলক উদযাপনের কথা উল্লেখ করা হয়। জয়শঙ্কর ওয়াডেফুলের বেঙ্গালুরু সফরের প্রশংসা করে বলেন, “আমি খুশি যে আপনি বেঙ্গালুরুতে গিয়ে আমাদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার অপার সম্ভাবনা দেখেছেন।” তিনি আরও বলেন যে, এই সফর ভারত-জার্মানি সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের এফটিএ আলোচনা ২০২২ সালের জুন মাসে পুনরায় শুরু হয়েছিল, যা ২০১৩ সালে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, এবং টেকসই উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই আলোচনা এখন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাচ্ছে।

বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, এফটিএ আলোচনা একটি উন্নত পর্যায়ে রয়েছে, এবং ব্রাসেলসে চলমান আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ইইউ-এর সঙ্গে এফটিএ-তে একটি অত্যন্ত উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছি। বাণিজ্য সচিব ব্রাসেলসে তাঁর সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন, এবং এই সপ্তাহে তাঁদের দল ভারতে আসছে।”

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়েন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই চুক্তি বছরের শেষ নাগাদ সম্পন্ন করার জন্য তাদের দলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisements

ফন ডের লায়েন বলেন, “ইইউ এবং ভারতের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চুক্তি হবে।” এই চুক্তি ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বাণিজ্য, প্রযুক্তি, এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবে।

জয়শঙ্কর এই বৈঠকে জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, সেমিকন্ডাক্টর সহযোগিতা, এবং সবুজ হাইড্রোজেন প্রযুক্তি। তিনি বলেন, “আমরা জার্মানির দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক বিষয়ে তাদের মতামত শুনতে মূল্য দিই।”

ওয়াডেফুলও জার্মানির পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বেঙ্গালুরুতে জার্মান ভাষা শিক্ষার প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানান।

ইইউ-ভারত এফটিএ ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের ২৫% শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে। এই চুক্তি ভারতের রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করবে এবং ইইউ-এর সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

২০২৩-২৪ সালে ভারত ও ইইউ-এর মধ্যে মোট বাণিজ্য ছিল ১৮০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ভারতের পণ্য রপ্তানি ছিল ৭৫.১৮ বিলিয়ন ডলার এবং পরিষেবা রপ্তানি ছিল ৩১.১৩ বিলিয়ন ডলার।

বিমায় জিএসটি হ্রাসের প্রস্তাব আলোচনা জিএসটি কাউন্সিলে

এই বৈঠক ভারত-জার্মানি সম্পর্কের গভীরতা এবং ইইউ-এর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতি উভয় দেশের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। জয়শঙ্কর এবং ওয়াডেফুলের আলোচনা ভারত-ইইউ এফটিএ-কে ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।