ট্রাম্পের নতুন ভিসা ফি নীতি ঘিরে ভারতীয় পেশাজীবীদের আশঙ্কা, কূটনৈতিক সুর জয়শঙ্করের

Jaishankar Global Workforce

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ‘At the Heart of Development: Aid, Trade, and Technology’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর শুক্রবার বৈশ্বিক কর্মশক্তি গড়ে তোলার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ORF)।

Advertisements

জয়শঙ্কর স্পষ্টভাবে বলেন, কেবলমাত্র জাতীয় জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের কর্মশক্তির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি মন্তব্য করেন, “কোথায় সেই বৈশ্বিক কর্মশক্তিকে রাখা হবে, সেটা রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশ্বের অনেক দেশের নিজস্ব জনসংখ্যা দিয়ে বাড়তে থাকা চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। এই সত্য থেকে কেউই পালাতে পারবে না।”

অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপট:

তার এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বজুড়ে অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসার ওপর এক লাখ ডলার ফি ঘোষণা করেছেন, যা ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে।

নতুন মডেলের প্রয়োজনীয়তা:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানের পুনর্গঠিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় এমন একটি মডেল তৈরি করতে হবে, যা হবে আরও গ্রহণযোগ্য, সমসাময়িক ও কার্যকর। তিনি মনে করিয়ে দেন, সময়ের অনিশ্চয়তা ও জটিলতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বাণিজ্য তার পথ খুঁজে নেয়। আধুনিক লজিস্টিক্স, শিপিং ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বাণিজ্যকে আগের চেয়ে অনেক সহজ করেছে।

পরিবর্তনের চালিকাশক্তি:

জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, দ্রুত পরিবর্তিত প্রযুক্তি, সংযোগ ব্যবস্থা এবং কর্মস্থলের প্রকৃতি আগামী দিনের বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আমূল বদলে দেবে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উদাহরণ হিসেবে ভারতের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (DPI) তুলে ধরেন, যা ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রহণযোগ্য মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Advertisements

অনিশ্চয়তার আবহ:

আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতির অস্থিরতার কথাও তিনি স্পষ্ট করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের নীতি পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “সময় এখন ভিন্ন। কয়েক মাসে, এমনকি কয়েক সপ্তাহেও বড় পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। আর জনমতের তীক্ষ্ণ নজরের কারণে এগুলির প্রভাব আরও তীব্র হচ্ছে।”

নতুন চ্যালেঞ্জ:

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশগুলো সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছে। এখন সেই চ্যালেঞ্জ আরও বিস্তৃত হয়েছে— বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এড়ানো। জয়শঙ্কর সতর্ক করে বলেন, “প্রায় পুরো অর্থনৈতিক শৃঙ্খলটাই এখন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অপ্রত্যাশিত সংকটের বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষিত করবেন কীভাবে? সেটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

কূটনৈতিক অগ্রাধিকার:

তার মতে, আজকের দিনে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা, অস্থিরতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করা এবং স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলা। বৈশ্বিক সমন্বয় ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংক্ষেপে, এস. জয়শঙ্কর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক কর্মশক্তি ভাগাভাগির মাধ্যমে একটি নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা তৈরির আহ্বান জানান। তিনি মনে করিয়ে দেন, প্রযুক্তি ও জনসংখ্যার সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে টিকে থাকতে হলে দেশগুলিকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।