জবলপুরে তেল ট্যাঙ্কারে আগুন, থমকে রেল পরিষেবা

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলার ভিটোনি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে একটি স্থির তেলের ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ আগুন (Jabalpur oil tanker fire) লাগার ঘটনায় জবলপুর-ইটারসি রেলপথে…

Jabalpur-Itarsi Rail Traffic Disrupted After Oil Tanker Fire Near Bhitoni

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলার ভিটোনি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে একটি স্থির তেলের ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ আগুন (Jabalpur oil tanker fire) লাগার ঘটনায় জবলপুর-ইটারসি রেলপথে যাতায়াত ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। পশ্চিম মধ্য রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হর্ষিত শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, রাত ৯টার দিকে জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ভিটোনি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এই ঘটনায় রেল স্টেশন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

   

ঘটনার বিবরণ এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

হর্ষিত শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, “আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তেলের ট্যাঙ্কারটি ভিটোনি তেল ডিপোর উদ্দেশে যাওয়ার পথে স্থির অবস্থায় ছিল। জবলপুর-ইটারসি রেলপথে শীঘ্রই যাতায়াত পুনরায় চালু হবে। আগুনের কারণ এখনও নির্ধারণ করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে কর্মকর্তারা এবং দমকল বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। একজন দমকল আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই এবং প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।”

জবলপুরের শহপুরা ভিটোনি তেল ডিপোর কাছে অবস্থিত এই রেলওয়ে স্টেশনে ৩০টি রেল র্যাক নিয়ে তেলের ট্যাঙ্কারটি দাঁড়িয়ে ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি র্যাকে আগুন ধরে যায়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে স্টেশন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে রেলওয়ে কর্মীরা ভিটোনি স্টেশন খালি করিয়ে দেয় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তৎপরতা শুরু করে। জবলপুর পৌর নিগম এবং অন্যান্য নগর সংস্থার দমকল বাহিনী দ্রুত ফায়ার ফাইটার নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। সৌভাগ্যবশত, এই ঘটনায় কোনও প্রাণহানি বা আহতের খবর পাওয়া যায়নি।

রেল যোগাযোগে প্রভাব

জবলপুর-ইটারসি রেলপথ মধ্যপ্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল সংযোগ। এই রুটে প্রতিদিন শতাধিক ট্রেন চলাচল করে, যা ভোপাল, দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই এবং নাগপুরের মতো প্রধান শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। আগুনের ঘটনার কারণে এই রুটে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং শীঘ্রই রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ চলছে।

এক্স-এ পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার পর তিনটি দিক থেকে বিপদ সংকেত সাইরেন বাজানো হয় এবং অন্যান্য ট্যাঙ্কারগুলোকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করা হয়। রেলওয়ে কর্মচারী এবং আধিকারিকদের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

আগুনের কারণ এবং তদন্ত

আগুনের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞ দল আগুনের উৎস নির্ধারণের জন্য কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাঙ্কারে কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা বৈদ্যুতিক সমস্যা এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে। তবে, তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এই ঘটনা রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং তেলের ট্যাঙ্কার পরিবহনের সময় গৃহীত সতর্কতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা

জবলপুর জেলা প্রশাসন এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পৌর নিগম এবং অন্যান্য সংস্থার দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলা প্রশাসনের একটি পোস্টে বলা হয়, “শহপুরা ভিটোনি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে রাত ৯টায় তেলের ট্যাঙ্কারে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার ফাইটার পাঠিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কোনও জানমালের ক্ষতি হয়নি।”

ভিটোনি রেলওয়ে স্টেশনে তেলের ট্যাঙ্কারে আগুনের ঘটনা জবলপুর-ইটারসি রেলপথে যাতায়াতে সাময়িক বিঘ্ন ঘটালেও রেলওয়ে এবং স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনা রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। আগুনের কারণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জন্য অগ্রাধিকার। যাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করছেন, শীঘ্রই এই রুটে স্বাভাবিক রেল চলাচল পুনরায় শুরু হবে।