ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে যুক্ত হতে চলেছে আর এক গৌরবময় অধ্যায়। আগামী ২ নভেম্বর ২০২৫, শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপিত হবে ইসরোর সর্বাধুনিক ও ভারী যোগাযোগ উপগ্রহ ‘সিএমএস-০৩’ (CMS-03)। দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক-৩ (LVM–3)–এর মাধ্যমে মহাকাশে পৌঁছবে এই উপগ্রহ, যা ইসরোর পঞ্চম কার্যকরী মিশন হতে চলেছে।
৪,৪০০ কিলোগ্রাম ওজনের সিএমএস–০৩ স্থাপন করা হবে জিওসিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিটে (GTO)। এর মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ–ভিত্তিক যোগাযোগ ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আসবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।
সিএমএস–০৩: ভারতের যোগাযোগে এক নতুন অধ্যায়
ইসরোর তৈরি এই মাল্টি-ব্যান্ড যোগাযোগ উপগ্রহটি ভারতের সমগ্র ভূখণ্ডের পাশাপাশি ভারত মহাসাগর অঞ্চলেও উচ্চমানের টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করবে। এর মধ্যে সংযোজিত হয়েছে C, Extended-C ও Ku ব্যান্ডের উন্নত ট্রান্সপন্ডার, যা একযোগে ভয়েস, ডেটা ও ভিডিও ট্রান্সমিশন সক্ষমতা বহন করবে।
ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যাবে দ্রুত, স্থিতিশীল ও নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ। শুধু বেসামরিক ক্ষেত্র নয়, উপগ্রহটি ভারতের প্রতিরক্ষা অবকাঠামোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই স্যাটেলাইটকে অনেক সূত্রে ‘GSAT–7R’ নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। এটি বিশেষত ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য নিরাপদ ও এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, যাতে নৌজাহাজ, সাবমেরিন ও যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে তথ্য আদান–প্রদান আরও সুরক্ষিত ও তাৎক্ষণিক হয়।
ভারতের ভারী রকেট LVM–৩: প্রযুক্তির নতুন প্রতীক ISRO LVM-3 CMS-03 launch date
ইসরোর ভারী রকেট LVM–৩ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই একই রকেট ২০২৩ সালের জুলাইয়ে চন্দ্রযান–৩-কে সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
এবার সেই একই রকেটের মাধ্যমে সিএমএস–০৩ মহাকাশে পাঠিয়ে ইসরো দেখাতে চলেছে, বৃহত্তর ও আরও উন্নত পেলোড উৎক্ষেপণের ক্ষমতা এখন ভারতের হাতেই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।
প্রস্তুতি শেষ, উৎক্ষেপণের কাউন্টডাউন শুরু
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, অক্টোবর ২৬ তারিখে সম্পূর্ণভাবে সংযোজিত হয়েছে রকেট। উৎক্ষেপণ-পূর্ব সমস্ত পরীক্ষা ও প্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে।
সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, নভেম্বরের শুরুতেই ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে যুক্ত হবে এক নতুন মাইলফলক।
সারকথা
‘সিএমএস–০৩’ শুধু একটি যোগাযোগ উপগ্রহ নয়, এটি ভারতের আত্মনির্ভর প্রযুক্তি, কৌশলগত অগ্রগতি ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রতীক। মহাকাশের গভীরে ভারতের উপস্থিতি ক্রমে আরও দৃঢ় হচ্ছে—যেখানে প্রতিটি উৎক্ষেপণই ভবিষ্যতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।


