Monday, December 8, 2025
HomeBharatপুলিশের জালে কৃষকের ছদ্মবেশে অস্ত্রোপাচারকারী জাহিদ

পুলিশের জালে কৃষকের ছদ্মবেশে অস্ত্রোপাচারকারী জাহিদ

- Advertisement -

আলওয়ার ৮ ডিসেম্বর: কৃষকের ছদ্মবেশে চাষের জমিতে হাঁটাচলা, মাথায় গামছা, (Interstate arms smuggler Jahid Khan)হাতে কাস্তে — উপর থেকে দেখলে সাধারণ গ্রামবাংলার একজন পরিশ্রমী কৃষক ছাড়া কিছুই মনে হতো না। কিন্তু এই কৃষকের বেশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল রাজস্থান–হরিয়ানা সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক বৃহৎ অস্ত্র চক্রের মাথা। অবশেষে রাজস্থানের মালাখেরা এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ধরা পড়ল আন্তঃরাজ্য অস্ত্র পাচারকারী জাহিদ খান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই হরিয়ানা থেকে বিভিন্ন জেলায় বেআইনি অস্ত্র সরবরাহ করছিল জাহিদ। তার বিরুদ্ধে গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নজরদারি চালাচ্ছিল আলওয়ার জেলা পুলিশ। জাহিদের চলাফেরা, যোগাযোগ এবং এলাকার সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধি খতিয়ে দেখে একাধিকবার পুলিশের টিম ছদ্মবেশে এলাকায় অভিযান চালায়। এরপরই শনিবার রাতে মালাখেরার একটি খড়ের ঘরে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

   

ম্যাক ৮ গতি, ডিআরডিও-র কামাল! BrahMos-II-এর প্রথম উড়ানের তারিখ নির্ধারণ

অভিযানের পর খড়ের ওই কুঁড়েঘরটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা তল্লাশি চালায় পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, বাইরে থেকে যে ঘরটিকে সাধারণ কৃষকের বিশ্রামস্থল মনে হচ্ছিল, ভিতরে ছিল অস্ত্র তৈরির এক গোপন কারখানা। উদ্ধার হয় একাধিক দেশি বন্দুক, অত্যাধুনিক পিস্তলের যন্ত্রাংশ, তৈরি ও আধা-তৈরি কার্তুজ, আধুনিক গুলি তৈরির সরঞ্জাম, বিস্ফোরক সামগ্রী এবং লাতুর–মধ্যপ্রদেশ থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন অত্যাধুনিক গানের মেশিন পার্টস।

পুলিশ সূত্রের দাবি, জাহিদের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক রাজ্যে অস্ত্র পাচার, গুণ্ডাদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ এবং বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তবে এতদিন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কংক্রিট প্রমাণ না থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে মালাখেরায় কৃষকের ছদ্মবেশে তার কার্যকলাপ পুলিশের সন্দেহ জাগায় এবং তার পরপরই সক্রিয় হয় বিশেষ অপারেশন টিম।

আলওয়ারের এসপি রাজীব পাশরিচা বলেন, “হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লি ঘিরে একটি বড় অস্ত্র চক্র কাজ করছে। জাহিদ সেই চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। তার কাছ থেকে যে অস্ত্র ও মেশিনারি উদ্ধার হয়েছে, তা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় এটি কোনও ছোটখাটো স্থানীয় সরবরাহ নয়, বরং একটি বৃহৎ নেটওয়ার্কের অংশ।”

তিনি আরও জানান, জাহিদের ফোন, যোগাযোগ তালিকা এবং ডিজিটাল লেনদেনের হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ তার সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে এবং তাদের ধরতে একাধিক রাজ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এই গ্রেফতারে হতবাক।

তাদের বক্তব্য, জাহিদকে তারা প্রতিদিন ক্ষেতের আড়ালে কাজ করতে দেখতেন। কখনও সন্দেহ জাগেনি যে তিনি অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “ওকে আমরা সাধারণ কৃষক বলেই জানতাম। কখনও বুঝতেই পারিনি যে ঘরের মধ্যে এসব চলছে।”

পুলিশ মনে করছে, জাহিদ কৃষকের ছদ্মবেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করত। গ্রামের ভেতরে এই ধরনের ছদ্মবেশে কারও গতিবিধি সাধারণত সন্দেহের উদ্রেক করে না। আর সেই সুযোগেই সে অস্ত্র তৈরির ও সংরক্ষণের কাজ চালাত।

তদন্তাধীন এই মামলাটি এখন আলওয়ার পুলিশ, হরিয়ানা পুলিশ এবং বিশেষ দফতরের যৌথ টিমের হাতে। জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ টিম একাধিক কাউন্টার-টেরর মডিউল এবং অপরাধবিশেষজ্ঞ সংস্থার সহযোগিতা নিচ্ছে। পুলিশ নিশ্চিত — এই গ্রেফতারের মাধ্যমে উত্তর ভারতের এক বৃহৎ অস্ত্র নেটওয়ার্কের রহস্য শিগগিরই ফাঁস হবে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular