ইন্দোর: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে শুক্রবার গভীর রাতে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মোট ২৪ জন হিজড়ে একযোগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁরা সবাই মেঝে পরিষ্কার করার তরল পদার্থ (ফ্লোর ক্লিনার) পান করেছিলেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও প্রশাসন। বর্তমানে সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই মর্মান্তিক পদক্ষেপের মূল কারণ দীর্ঘদিন ধরে চলা অন্যায় ও প্রশাসনিক উদাসীনতা। প্রায় তিন মাস আগে দু’জন ব্যক্তি অক্ষয় কুমাওন ও পঙ্কজ জৈন যারা নিজেদের ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিতেন, তাঁরা এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যাক্তিকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেল করেন। ভুক্তভোগী অভিযোগ দায়ের করলেও, পুলিশি পদক্ষেপ ছিল অত্যন্ত ধীর ও অসংবেদনশীল। বারবার থানায় গিয়েও ন্যায়বিচার না পাওয়ায় অবশেষে হতাশা থেকেই এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
আইএফএ শিল্ড পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে মাঠে নামতে তৈরি ইস্টবেঙ্গল, ক্লাবের টুইট ঘিরে উচ্ছ্বাস
ইন্দোর পুলিশ কমিশনার হরিনারায়ণ চর্রসিয়া জানান, “এই ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধে আগেও প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ ছিল। আমরা ইতিমধ্যেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” অন্যদিকে, হিজড়ে সম্প্রদায়ের সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
তাঁদের দাবি, “আমাদের অস্তিত্বই যেন এই সমাজে তুচ্ছ। আইন আছে, কিন্তু সুরক্ষা নেই। পুলিশের কাছে গিয়ে ন্যায় চাইলে আরও অপমান সহ্য করতে হয়।” অনেকেই জানান, এই ঘটনার আগে গত কয়েক মাস ধরে তাঁরা অভিযোগ করেও কোনও পদক্ষেপ দেখেননি। উলটে হুমকি, ব্যঙ্গ ও মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়েছেন।
এই ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইন্দোরের সামাজিক কর্মী সীমা কুশওয়া বলেন, “এটা শুধু একটা আত্মহত্যার চেষ্টা নয়, এটা এক গোষ্ঠীর আর্তনাদ, যারা বছরের পর বছর অবহেলিত। সরকার কাগজে কলমে ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইন করেছে, কিন্তু বাস্তবে তাঁদের জন্য কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।”
চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি ২৪ জনের শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে মানসিকভাবে তাঁরা ভীষণ ভেঙে পড়েছেন। মনোবিদদের তত্ত্বাবধানে তাঁদের কাউন্সেলিং চলছে। সমাজের এক বড় অংশ এখন প্রশ্ন তুলছে যদি প্রশাসন শুরু থেকেই সক্রিয় হত, তবে কি এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতো?
ভারতে ২০১৯ সালে “Transgender Persons (Protection of Rights) Act” পাস হলেও, বাস্তবে ট্রান্সজেন্ডারদের উপর নির্যাতন, সামাজিক বঞ্চনা ও পুলিশি অবহেলার ঘটনা এখনো থামেনি। ইন্দোরের এই ঘটনা যেন সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতার আরেকটি প্রমাণ।