ইন্দিরা গান্ধী করবা চৌথ পালন করতেন? নেহরু-কন্যার অজনা কাহিনী

কলকাতা: ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পরিচিত ছিলেন ‘আয়রন লেডি’ নামে৷ তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা রাজনৈতিক মহলে ছি দৃষ্টান্ত৷ রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনকে কখনো…

কলকাতা: ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পরিচিত ছিলেন ‘আয়রন লেডি’ নামে৷ তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা রাজনৈতিক মহলে ছি দৃষ্টান্ত৷ রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনকে কখনো উপেক্ষা করেননি তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত অনুশাসনের এক নিদর্শন হল করবা চৌথের উপবাস৷ যা জনসাধারণের চোখের আড়ালে নীরবে তিনি পালন করতেন। 

Advertisements

বায়োগ্রাফি

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জীবনীকারদের লেখায়, বিশেষত পুপুল জয়াকরের Indira Gandhi: A Biography এবং ক্যাথরিন ফ্রাঙ্কের Indira: The Life of Indira Nehru Gandhi-তে তাঁর এই ব্রত পালনের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। ইন্দিরা করবা চৌথের এই প্রথা শিখেছিলেন তাঁর মা, কমলা নেহরুর কাছ থেকে। সাধারণভাবে করবা চৌথ ধর্মীয় রীতিতে স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনার জন্য পালন করা হয়, তবে ইন্দিরার কাছে এটি ছিল শারীরিক ও মানসিক নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক বিবাহিত জীবনে, দিল্লি ও এলাহাবাদে বসবাসকালে তিনি এই উপবাস পালন করতেন একান্ত ব্যক্তিগতভাবে। তখনকার দিনে ক্যামেরা বা সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি ছিল না, তাই প্রথাটি ছিল সম্পূর্ণ অন্তর্মুখী ও ব্যক্তিগত অভ্যাস। তিনি কখনোই এই প্রথাকে বোঝা মনে করতেন না—উপবাস তাঁর কাছে শৃঙ্খলা, সংযম এবং মানসিক শক্তির প্রতীক ছিল।

কী ভাবে পালন করতেন উপবাস? Indira Gandhi Karva Chauth

প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পরও ইন্দিরা এই অভ্যাস বজায় রেখেছিলেন। তাঁর গৃহকর্মী সারলা মিশ্র জানিয়েছেন, সারাদিন খাবার ও জল থেকে দূরে থাকতেন৷ সন্ধ্যায় চাঁদের আলোয় ঘরের জানালা থেকে প্রার্থনা করতেন। উপবাস শেষে পান করতেন এক গ্লাস জল। উপবাসের সময় ভারী অলঙ্কার পরতেন না; সাধারণ খাদি শাড়ি ও চুলে ফুল দিয়ে শান্ত ও সংযমী ভঙ্গিতে প্রথা পালন করতেন।

ইন্দিরার ব্যক্তিগত সচিব যশপাল কাপুরের কথায়, ইন্দিরা বিশ্বাস করতেন যে উপবাস শরীর ও মন নিয়ন্ত্রণের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। নবরাত্রিতেও তিনি নিয়মিত এই অনুশীলন পালন করতেন।

ইন্দিরা আজও প্রেরণা

ইন্দিরার এই নীরব অনুশীলনের একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাবও রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে দিল্লিতে আসার পর সোনিয়া গান্ধী করবা চৌথ পালন শুরু করেন।  দেশ যখন ইন্দিরা গান্ধীকে শক্তিশালী, দৃঢ় ও নির্ণায়ক নেত্রী হিসেবে স্মরণ করে, তখন এই ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো দেখায়, তিনি জনসেবা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন। নিজের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে সংযম, ভক্তি ও আত্মসংযমের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যা আজও প্রেরণা হিসেবে বিদ্যমান।