ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস (FDTL)-এর দ্বিতীয় পর্যায় কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ইন্ডিগোর পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিমান সংস্থাটি কয়েক দিন ধরে ব্যাপক সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল করছে। বৃহস্পতিবারও প্রায় ৫৫০টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সংস্থার অন-টাইম পারফরম্যান্সও ভেঙে পড়ে— বুধবার তা নেমে দাঁড়ায় মাত্র ১৯.৭ শতাংশ, যা ইন্ডিগোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতনগুলির মধ্যে একটি।
পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কবে?
সংস্থাকে তলব করার পর ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (DGCA)-কে ইন্ডিগো জানিয়েছে, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর আগে পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। এর আগে পর্যন্ত সংস্থাটি FDTL-এর কিছু নিয়মে অস্থায়ী ছাড় চেয়ে আবেদন করেছে। ইন্ডিগোর দাবি, নতুন নিয়মে পাইলটদের রাতের ল্যান্ডিং ও ফ্লাইট ঘন্টা কমে যাওয়ায় অপারেশনে বড় চাপ তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রু ম্যানেজমেন্টে পরিকল্পনার ঘাটতি— যা সংস্থাও স্বীকার করেছে।
পিটিআই সূত্রে ইন্ডিগো জানিয়েছে যে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ফ্লাইট বাতিল হবে, এবং ৮ ডিসেম্বরের পর অপারেশন আরও কমানো হবে যাতে পুনর্গঠন সহজ হয়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় উড়ানমন্ত্রী কে রামমোহন নাইডু অসন্তোষ প্রকাশ করে সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাত্রীদের আগাম জানাতে। একই সঙ্গে বিমানভাড়ার অতি দ্রুত বৃদ্ধি আটকাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় নজরদারি শুরু করেছে। ইন্ডিগোর অপারেশন কন্ট্রোল রুমেও আধিকারিকদের মোতায়েন করা হয়েছে।
মূল সমস্যা কোথায়? IndiGo massive flight cancellations
পাইলট সংকটই মূল সমস্যা— ডিসেম্বর মাসে ইন্ডিগোর কাছে রয়েছে ২,৩৫৭ জন ক্যাপ্টেন এবং ২,১৯৪ জন ফার্স্ট অফিসার। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় তা কম। অক্টোবর-নভেম্বরের তুলনায় চাহিদা দ্রুত বেড়ে গেলেও সময়ে নিয়োগ করা হয়নি, অভিযোগ পাইলট সংগঠনগুলির। এএলপিএ (ALPA) জানিয়েছে, এটি সংস্থার ‘প্রো-অ্যাকটিভ রিসোর্স প্ল্যানিং’-এর ব্যর্থতা। এফআইপি (FIP) আরও অভিযোগ করেছে— ইন্ডিগো অকারণে হায়ারিং ফ্রিজ বজায় রেখেছিল, যদিও নতুন FDTL নিয়ম কার্যকর করতে দুই বছর সময় ছিল।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে DGCA সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে— বিস্তারিত রোডম্যাপ জমা দিতে হবে, যেখানে থাকবে পাইলট নিয়োগ পরিকল্পনা, বিমান সংযোজন, প্রশিক্ষণ, রোস্টার পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি মূল্যায়ন। একই সঙ্গে প্রতি ১৫ দিনে একবার অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এ পরিদর্শনে গিয়ে DGCA যাত্রী পরিষেবার জনবলকে “অপর্যাপ্ত” বলে উল্লেখ করে তা তৎক্ষণাৎ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
ইন্ডিগোর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
সব মিলিয়ে ইন্ডিগোর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ— দ্রুত পরিষেবা স্থিতিশীল করা। সংস্থার সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের জানিয়েছেন, “পাংচুয়ালিটি ফিরিয়ে আনা সহজ লক্ষ্য হবে না।” যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানো, পাইলটের অভাব মেটানো এবং নতুন নিয়মে মানিয়ে নেওয়া— আগামী কয়েক মাস ইন্ডিগোর কাছে কঠিন পরীক্ষাই হতে চলেছে।
