মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্তে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস (Monkeypox Virus বা MPV) নিয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছেন ভারতের গবেষকরা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের অধীনস্থ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর…

Indian Researchers Unveil New Method to Decode Monkeypox Virus for Diagnostics

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস (Monkeypox Virus বা MPV) নিয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছেন ভারতের গবেষকরা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের অধীনস্থ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ (JNCASR)-এর বিজ্ঞানীরা মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের ভাইরোলজি বোঝার জন্য নতুন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তাদের এই গবেষণা রোগ নির্ণয় এবং থেরাপির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

মাঙ্কিপক্স: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকট
গত তিন বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দু’বার মাঙ্কিপক্সকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালের সাম্প্রতিক মহামারিতে আফ্রিকার প্রায় ১৫টি দেশ এবং আফ্রিকার বাইরে তিনটি দেশে এই রোগ ছড়িয়েছে। ভাইরাসটির অপ্রত্যাশিত বিস্তারের কারণে এর সংক্রমণের ধরন এবং লক্ষণগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব রয়েছে। ফলে ভাইরাসের কার্যপ্রক্রিয়া বোঝা এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় ও থেরাপির উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

   

গবেষণার নতুন পথ
গবেষকরা জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস একটি ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ (dsDNA) ভাইরাস। বর্তমানে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (PCR) পদ্ধতিতে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। তবে এটি ডিএনএ-র অ্যাম্প্লিফিকেশন এবং ফ্লুরোসেন্ট প্রোব ব্যবহার করে, যা নির্ভুলতার ক্ষেত্রে অনেক সময় সীমাবদ্ধ।

JNCASR-এর গবেষণায় বিজ্ঞানীরা MPV জিনোমে একটি নতুন ধরনের চার-স্তরযুক্ত ডিএনএ স্ট্রাকচার চিহ্নিত করেছেন, যা গয়ানিন-কোয়াড্রুপ্লেক্স (GQ) নামে পরিচিত। এই GQ স্ট্রাকচারগুলি উচ্চমাত্রায় সংরক্ষিত, শারীরবৃত্তীয় অবস্থায় স্থিতিশীল, এবং অন্যান্য পক্স ভাইরাস বা মানব ডিএনএ-তে অনুপস্থিত।

নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার
গবেষকরা একটি বিশেষ ফ্লুরোজেনিক মলিকিউলার প্রোব (BBJL) ব্যবহার করে GQ স্ট্রাকচার সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করেছেন। এই BBJL প্রোব MPV GQ-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ২৫০ গুণ বেশি ফ্লুরোসেন্ট আউটপুট দিয়েছে। এর মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

গবেষকরা বলেন, “GQ স্ট্রাকচারগুলির উচ্চমাত্রার সংরক্ষণশীলতা এবং অন্য ভাইরাস বা প্যাথোজেনের সঙ্গে মিল না থাকার কারণে এগুলি রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি মূল্যবান লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। পাশাপাশি, থেরাপির ক্ষেত্রেও এর প্রভাব হতে পারে।”

রোগ নির্ণয়ে সম্ভাবনা
এই নতুন পদ্ধতি মাঙ্কিপক্সের নির্ণয়ে বিদ্যমান প্রযুক্তির তুলনায় আরও নির্ভুল এবং কার্যকর হতে পারে। বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যাম্প্লিফিকেশন ভিত্তিক পদ্ধতিতে অনেক সময় ভুল ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। নতুন GQ স্ট্রাকচার নির্ভর প্রযুক্তি এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারে।

গবেষক দলের ভাষ্যমতে, MPV জিনোমের আরও মানচিত্রায়ন করে ভবিষ্যতের থেরাপির জন্য GQ লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই গবেষণার মাধ্যমে GQ ভিত্তিক নতুন ডায়াগনস্টিক প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যান্টি-ভাইরাল থেরাপির বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

বিশ্বজুড়ে গবেষণার অবদান
JNCASR-এর গবেষণায় চিহ্নিত GQ স্ট্রাকচার শুধু মাঙ্কিপক্স নয়, অন্যান্য ডিএনএ ভিত্তিক ভাইরাসের গবেষণাতেও ভূমিকা রাখতে পারে। মাঙ্কিপক্সের ভাইরোলজি নিয়ে আরও গভীর গবেষণার পাশাপাশি, এর ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি বিকাশ করা যাবে।

ভবিষ্যতের পথ
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল MPV মোকাবিলায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এই আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে, যারা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী। গবেষকরা বলেন, “আমাদের এই প্রাপ্তি মাঙ্কিপক্স রোগ নির্ণয়ের চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে সহায়ক হবে।”

ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এই অবদান বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণায় ভারতের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে। নতুন প্রযুক্তির এই প্রয়োগ শুধু মাঙ্কিপক্স নয়, ভবিষ্যতের অন্যান্য ভাইরাস মোকাবিলাতেও কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে।