দূরপাল্লার ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় রেল (Indian Railways)। দেশের প্রায় ৭৪ হাজার ট্রেন কোচে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫ হাজার ইঞ্জিনেও বসানো হবে নজরদারি ক্যামেরা। রবিবার এক রেল আধিকারিকের মাধ্যমে এই খবর সামনে এসেছে। রেল জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ট্রেনের মধ্যে চুরি, ডাকাতি, অপহরণ বা অন্যান্য অপরাধ দমন করা অনেক সহজ হবে।
রেল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কোচে ৪টি করে এবং প্রতিটি ইঞ্জিনে ৬টি করে উন্নতমানের সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এই ক্যামেরাগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ট্রেন ১০০ কিলোমিটার বেগে চললেও পরিষ্কার ফুটেজ পাওয়া যায়। আরও জানা গিয়েছে, এই ক্যামেরাগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হবে যাতে সন্দেহজনক আচরণ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দ্রুত শনাক্ত করা যায়।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, রেল প্রতিমন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ রেল আধিকারিকদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। বৈঠকের পরেই সিদ্ধান্ত হয়, সারা দেশের ৭৪ হাজার কোচ এবং ১৫ হাজার ইঞ্জিনে সিসিটিভি বসানো হবে। সেই নির্দেশ ইতিমধ্যেই রেল দফতরে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
➡️ #Railways to Install CCTV Cameras in Coaches to Enhance Passenger Safety
➡️ CCTV Cameras in All 74,000 Coaches and 15,000 Locos for Enhanced Safety
➡️ Railways to Equip Every Coach with 4 CCTV Cameras, Locomotives with 6 Cameras
➡️ High-Quality CCTV Footage to Be Ensured… pic.twitter.com/VUaLIeBS33
— PIB India (@PIB_India) July 13, 2025
রেল মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, “বিগত কিছুদিনে ট্রেনে যাত্রীদের সঙ্গে অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। ইতিমধ্যেই কিছু কোচে পরীক্ষামূলকভাবে সিসিটিভি বসানো হয়েছিল এবং তার সুফল মিলেছে।”
তবে এই উদ্যোগের প্রশংসার পাশাপাশি প্রশ্নও উঠেছে। অনেকেই বলছেন, যেখানে একের পর এক বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে, সেখানে ‘কবচ’ (KAVACH) প্রযুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজন ছিল। সেই জায়গায় সিসিটিভি বসানো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রেল বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত, সাম্প্রতিক করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য বড় দুর্ঘটনার পর ট্র্যাক ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের দিকেই বেশি মনোযোগ দরকার ছিল বলে মত অনেকের।
তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, সুরক্ষা কোনও একক দিক থেকে নয়, সামগ্রিকভাবে উন্নত করতে হবে। তাই যাত্রীদের ওপর নজরদারি, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপের জন্য ক্যামেরা বসানো জরুরি।
রেল যাত্রীদের একাংশ অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীরা বলছেন, কোচে ক্যামেরা থাকলে হয়রানি বা নিগ্রহের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। অপরাধীরা সতর্ক থাকবে এবং যাত্রীরা নিজেদের অনেক বেশি নিরাপদ ভাববেন।
সবমিলিয়ে, ভারতীয় রেলযাত্রা আরও সুরক্ষিত এবং আধুনিক করার লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রেল মন্ত্রক। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতটা দ্রুততা দেখাতে পারে ভারতীয় রেল।