ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার প্রাণভোমরা ভারতীয় রেল এক চরম সমস্যার মুখোমুখি। যাত্রী পরিবহনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও, ট্রেন এবং স্টেশন চত্বরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে এক জটিল সামাজিক সমস্যা—গুটখা ও পানের দাগ। আর এই দাগ পরিষ্কার করতে প্রতি বছর রেল খরচ করছে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা, যা একটি ভান্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরির সমপরিমাণ।
সমস্যার গভীরতা
সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে দেখা গেছে, দুজন কর্মী রেলগাড়ির ভিতরে গুটখার দাগ মুছতে ব্যস্ত। মেঝে ও দেওয়ালে ছোপ ছোপ দাগ যেন রেলের পরিচ্ছন্নতার ছবি কলঙ্কিত করছে। যদিও রেল মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্যয়ের পরিমাণ জানায়নি, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে (যেমন ইন্ডিয়া টুডে, দ্য ব্রিজ ক্রনিকল) বলা হয়েছে, এই ব্যয় মূলত গুটখা, পান ও অন্যান্য থুথুর দাগ পরিষ্কারের জন্য।
গুটখা: একটি সামাজিক অভিশাপ
গুটখা, যা সুপারি, তামাক ও সুগন্ধি উপাদানের মিশ্রণ, ভারতের বহু অঞ্চলে বিশেষত গ্রামীণ জনপদে জনপ্রিয়। সমস্যার মূল হলো—ব্যবহারকারীরা রাস্তাঘাট, বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে ট্রেনের মেঝে ও দেওয়াল পর্যন্ত যত্রতত্র থুথু ফেলেন। এতে শুধু দৃষ্টিকটু দৃশ্য তৈরি হয় না, বরং জনস্বাস্থ্যের উপরও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। স্বচ্ছ ভারত মিশন এর আওতায় রেল বহুবার পরিষ্কার অভিযান চালালেও নাগরিকদের আচরণ অপরিবর্তিত থাকায় সমস্যাটি রয়ে গেছে।
অর্থের বিকল্প ব্যবহার কোথায় সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ১,২০০ কোটি টাকা যদি রেল অবকাঠামো উন্নয়নে, যাত্রী সুরক্ষায় বা নতুন ট্রেন তৈরিতে ব্যয় করা যায়, তবে তার সুফল দেশের কোটি যাত্রী পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, এই টাকায় প্রায় ১০–১১টি ভান্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরি সম্ভব।
নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছেই গুটখা
বর্তমানে গুটখা বেশিরভাগ রাজ্যে নিষিদ্ধ হলেও ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এক সমীক্ষা বলছে, ভারতের প্রায় ১২.১% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গুটখা বা পানমশলা ব্যবহার করেন। দুর্বল আইন প্রয়োগ ও ফাঁকফোকরেই এর প্রসার থামছে না।
সরকারি রাজস্ব বনাম সামাজিক খরচ
গুটখা ও তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার বছরে ১৫,০০০ কোটিরও বেশি রাজস্ব আদায় করে GST ও শুল্ক বাবদ। একদিকে রাজস্ব আসছে, অন্যদিকে রেলের মতো খাতকে দাগ মুছতে বিপুল অর্থ ঢালতে হচ্ছে। এ যেন এক দ্বিমুখী পরিস্থিতি—যা নাগরিক সমাজে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
সমাধানের সম্ভাবনা
🔹 স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক প্রচার
🔹 রেল স্টেশনে তামাকবিরোধী বিজ্ঞাপন
🔹 গুটখা বিক্রেতাদের ওপর কঠোর নজরদারি
🔹 থুথু ফেলার বিরুদ্ধে জরিমানা ও CCTV নজরদারি
🔹 যাত্রীদের মধ্যে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি
ভারতীয় রেলের সামনে যে সমস্যাটি দাঁড়িয়েছে তা শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নয়, এটি সামাজিক অভ্যাস ও নাগরিক সচেতনতার সঙ্গেও জড়িত। ১,২০০ কোটি টাকার বোঝা রেলের উন্নয়ন প্রকল্পকে বাধাগ্রস্ত করছে। যদি গুটখার ব্যবহার ও থুথু ফেলার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে সেই অর্থ দেশের রেল পরিষেবা আধুনিকীকরণে ব্যয় করে যাত্রীদের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।