নিমিশা প্রিয়া মামলায় ভারত সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টা

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত (Indian Government) ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মামলায় ভারত সরকার সব ধরনের সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করছে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। এই…

Nimisha Priya Death Sentence

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত (Indian Government) ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মামলায় ভারত সরকার সব ধরনের সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করছে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। এই অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়ে ভারত সরকার নিমিষার পরিবার, ইয়েমেনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।

সম্প্রতি নিমিশার পরিবারকে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়ার জন্য ভারত সরকার তৎপরতা চালিয়েছে। এর ফলে ইয়েমেনের কর্তৃপক্ষ নিমিষার মৃত্যুদণ্ড, যা ১৬ জুলাই, ২০২৫-এ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত করেছে। রণধীর জয়সওয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নিমিশা প্রিয়ার মামলা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়।

   

ভারত সরকার এই মামলায় সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করছে। আমরা পরিবারের জন্য আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের সহায়তার জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও, আমরা নিয়মিত কনস্যুলার ভিজিটের ব্যবস্থা করেছি এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।

সম্প্রতি আমরা নিমিষার পরিবারকে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আরও সময় দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। ইয়েমেনের কর্তৃপক্ষ ১৬ জুলাই নির্ধারিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা স্থগিত করেছে। আমরা এই বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সব ধরনের সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করছি।

আমরা কিছু বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছি।”নিমিশা প্রিয়া, কেরালার পালাক্কাড জেলার কোল্লেঙ্গোডের বাসিন্দা, ২০০৮ সালে কাজের জন্য ইয়েমেনে যান। তিনি সেখানে একটি সরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি নিজের একটি ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনা করেন এবং ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী স্থানীয় ব্যবসায়ী তালাল আবদো মেহদিকে তার ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে নেন।

২০১৭ সালে তালালের মৃত্যুর ঘটনায় নিমিশাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ইয়েমেনের একটি বিচারিক আদালত ২০১৮ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়, যা ২০২৩ সালে দেশটির সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক বহাল রাখা হয়। বর্তমানে নিমিশা ইয়েমেনের রাজধানী সানায় কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন, যা হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন।

ইয়েমেনে ভারতের কোনো কূটনৈতিক মিশন না থাকলেও, ভারত সরকার সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ভারতীয় মিশনের মাধ্যমে এই মামলায় কাজ করছে। সৌদি আরব, ইরান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে হুথি নেতাদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে।

Advertisements

নিমিশার মুক্তির জন্য গঠিত ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ এবং অন্যান্য সংগঠন অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য ‘দিয়া’ বা রক্তমূল্য হিসেবে প্রায় ৫৮,০০০ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। তবে, ভুক্তভোগী পরিবার এই ক্ষতিপূরণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা সমাধান প্রক্রিয়াকে জটিল করেছে।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়ন মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের ঘোষণাকে “আশ্বাসদায়ক” বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এটি সমঝোতার জন্য অতিরিক্ত সময় প্রদান করছে।

ধর্মীয় হস্তক্ষেপ ও সমাধানের সম্ভাবনা

কেরালার ধর্মীয় নেতা শেখ আবুবকর আহমদ কান্থাপুরম ইয়েমেনের ধর্মীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিমিষার ক্ষমার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসলামে ‘দিয়া’ প্রথার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে ক্ষমা প্রদানের বিধান রয়েছে। নিমিষার পরিবার এই ক্ষতিপূরণ প্রদানে ইচ্ছুক হলেও, ভুক্তভোগী পরিবারের অস্বীকৃতি এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বন্ড বাজারে বড় পদক্ষেপ, কেন্দ্রের ৩৬,০০০ কোটির ফান্ডরেইজিং পরিকল্পনা

ইয়েমেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ এই মামলার সমাধানকে আরও জটিল করে তুলেছে। হুথি কর্তৃপক্ষের উপর আন্তর্জাতিক চাপ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারত সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা এই পরিস্থিতিতে একটি সমাধানের আশা জাগিয়েছে।

নিমিশা প্রিয়ার মামলা ভারতের কূটনৈতিক এবং আইনি প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হওয়ায় নিমিষার পরিবার এবং সমর্থকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে, ইয়েমেনের শরিয়া আইন এবং ভুক্তভোগী পরিবারের অবস্থান এই মামলার চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভারত সরকার এবং সমর্থক সংগঠনগুলি এই বিষয়ে তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।