ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব (Indian Citizenship) নিয়ে একটি বিতর্কের ঝড় উঠেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। একটি সাম্প্রতিক সংবাদে…

Indian Citizenship: Over 2 Lakh Indians Renounced Citizenship in 2024: Brain Drain Sparks Debate

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব (Indian Citizenship) নিয়ে একটি বিতর্কের ঝড় উঠেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। একটি সাম্প্রতিক সংবাদে জানা গেছে যে, ২০২৪ সালে ২ লক্ষ ৬ হাজার ৩৭৮ জন ভারতীয় নাগরিক তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এই তথ্যটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ব্যাপক আলোচনা আরম্ভ হয়েছে। এই সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, এটি এখনো উল্লেখযোগ্য, যেহেতু ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৬২০ এবং ২০২৩ সালে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ২১৯। এই তথ্যটি ভারতের যুবশক্তি ও দক্ষ জনগোষ্ঠীর বৈদেশিক পলায়নের একটি স্পষ্ট সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা “ব্রেইন ড্রেইন” নামে পরিচিত একটি সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে।

কেন ত্যাগ করছেন নাগরিকত্ব?
প্রথমত, উচ্চ করের চাপ এবং করের সুবিধার অভাব একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন যে, ভারতের করব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক নীতিগুলো সুযোগ প্রত্যাশীদের জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয়। দ্বিতীয়ত, কাস্ট-ভিত্তিক প্রত্যয়ন এবং মেধার অবহেলা বিষয়টি বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন যে, যোগ্যতার পরিবর্তে প্রত্যয়নের প্রাধান্য এবং সরকারি চাকরির সুযোগে ভুল বণ্টন ভারতীয় যুবদের বিদেশে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তৃতীয়ত, দ্রুত বাড়তে থাকা দূষণ, ভারতের অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অক্ষমতা এই সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

   

একজন ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ভারত একটি এমন দেশ যেখানে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি উচ্চ কর আদায় করা হয়, কিন্তু তার সাথে সুযোগ বা সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে শিক্ষিত ও ধনী মানুষ বিদেশে চলে যাচ্ছেন।” অন্য একজন জানিয়েছেন, “২ লক্ষের বেশি মানুষ কাস্ট-ভিত্তিক রাজনীতি ও পথের গর্ত থেকে রেহাই পেতে বিদেশে চলে গেছেন।” এই মন্তব্যগুলো সামাজিক গণমাধ্যমে বিতর্কের জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে তুলেছে।

দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্ন
ভারতের বর্তমান নীতি অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকত্বের কোনো সুযোগ নেই। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে, যদি কেউ অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, তবে তাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়। এই নীতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন যে, কেন ভারত দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেয় না, যেমনটি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো প্রদান করে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারেন, কিন্তু ভারতীয়রা তা পারে না। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ থাকলে অনেকে ভারতের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতো।”

এই প্রস্তাবের পেছনে যুক্তি হলো, যদি ভারত দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়, তবে বিদেশে গিয়ে সফল হওয়া ভারতীয়রা তাদের মূল দেশের সাথে সংযোগ রাখতে পারবে এবং তাদের অর্থনৈতিক অবদান কম হবে না। বর্তমানে, পরিস্থিতি এমন যে, নাগরিকত্ব ত্যাগের ফলে ভারতের জনশক্তি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হ্রাস পাচ্ছে।

Advertisements

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
স্ট্যাটিস্টা এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, যারা নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন, তারা প্রধানত উচ্চ শিক্ষিত পেশাদার, উদ্যোক্তা এবং উচ্চ আয়ের মানুষ। এই “ব্রেইন ড্রেইন” ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রবণতা চলতে থাকলে ভারতের ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, ভারতের বর্তমানে বিদেশে প্রায় ১৮ মিলিয়ন নাগরিক আছে, এবং তারা প্রতি বছর বড় অংশ রেমিট্যান্স পাঠান, যা দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু নাগরিকত্ব ত্যাগের ফলে এই অবদান কমতে পারে।

সামাজিক দিক থেকে, এই পলায়ন দেশের যুবশক্তির উৎসাহ ভাঙতে পারে এবং সামাজিক অসমতার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। অনেকে মনে করছেন, যদি সরকার মেধার প্রশ্রয় দেয়, করের ব্যবস্থা স্বচ্ছ করে, এবং অবকাঠামো উন্নত করে, তবে এই প্রবণতা কমতে পারে।

ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগের এই বৃদ্ধি একটি জটিল সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে, যা শুধুমাত্র সরকারি নীতির পরিবর্তন দিয়ে সমাধান হবে না, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রয়োজন। দ্বৈত নাগরিকত্বের মতো নতুন উদ্যোগ নেওয়া এবং শিক্ষা, চাকরি ও অবকাঠামোর উন্নতি সাধন করা জরুরি। নইলে, ভারত তার সেরা মানুষদের হারিয়ে ফেলতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করবে। এই বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের অপেক্ষা রয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ গড়বে।