১৯৭১-র দলিল তুলে আমেরিকাকে জবাব ভারতীয় সেনার, ট্রাম্পের হুমকির পরেই পোস্ট

নয়াদিল্লি: নিশানা এবার উলটো দিকে! রাশিয়ার তেল কিনে তা ‘লাভে’ বিক্রির অভিযোগ তুলে ভারতকে শুল্কবৃদ্ধির হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ঠিক পরদিনই পূর্ব…

indian army shares 1971 clipping

নয়াদিল্লি: নিশানা এবার উলটো দিকে! রাশিয়ার তেল কিনে তা ‘লাভে’ বিক্রির অভিযোগ তুলে ভারতকে শুল্কবৃদ্ধির হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ঠিক পরদিনই পূর্ব কমান্ডের তরফে ১৯৭১ সালের একটি পত্রিকার ক্লিপিংস শেয়ার করল ভারতীয় সেনা, যেখানে পরিষ্কার লেখা, পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে আমেরিকা, তা-ও কয়েক দশক ধরে (indian army shares 1971 clipping)।

আমেরিকা ও চিন অস্ত্র তুলে দিয়েছে ইসলামাবাদের হাতে

১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট তারিখের সেই খবরের শিরোনাম— “US ARMS WORTH $2 BILLION SHIPPED TO PAKISTAN SINCE ’54”। ভারত-পাক যুদ্ধের ঠিক আগেই রাজ্যসভায় তৎকালীন প্রতিরক্ষা উৎপাদন মন্ত্রী ভি.সি. শুক্ল জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে ন্যাটো এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের তরফে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফ্রান্স পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করলেও, আমেরিকা ও চিন কার্যত “throwaway prices”-এ অস্ত্র তুলে দিয়েছে ইসলামাবাদের হাতে। সেই অস্ত্রই ব্যবহৃত হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে।

   

এই ঐতিহাসিক দলিল সামনে এনে কার্যত আমেরিকাকে একহাত নিল ভারত। ভারতীয় সেনার পোস্টের ক্যাপশন— “This day, that year. Build-up of war – August 5, 1971.”

ট্রাম্পের মন্তব্য এবং ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ তোলেন— “ভারত বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে। সেই তেল আবার বাজারে বিক্রি করে লাভ করছে।” এরপরই তার হুঁশিয়ারি— ভারতের পণ্যে আমেরিকা ‘substantially’ শুল্ক বাড়াবে।

তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, “এটা দ্বিচারিতা। ইউরোপ বা আমেরিকা নিজেরাও এখনও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত যা করছে, তা দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।”

ভারতের পাল্টা কূটনৈতিক ভাষ্য:

“আমরা যেমন রাশিয়া থেকে তেল নিচ্ছি, তেমনই ইউরোপ নিচ্ছে খনিজ, সার, রাসায়নিক, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি।”

Advertisements

“আমেরিকা নিচ্ছে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড, প্যালাডিয়াম, সার ও অন্যান্য রাসায়নিক।”

“আমাদের কাছে এটা জাতীয় প্রয়োজন। যারা সমালোচনা করছে, তারাই নিজেরা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে।”

ভারতের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে ইউরোপীয় দেশগুলির জন্য রাশিয়া তাদের ঐতিহ্যবাহী তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ভারত সেই ঘাটতি পূরণ করতে বাধ্য হয়। বরং, তখন আমেরিকা ভারতকে উৎসাহই দিয়েছিল রাশিয়ার তেল কিনতে, যাতে আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল থাকে।

কূটনৈতিক বার্তা স্পষ্ট

১৯৭১ সালের দলিল প্রকাশ করে ভারতীয় সেনার এই ‘পোস্ট’ নিছক ইতিহাসচর্চা নয়। এই বার্তার মধ্য দিয়ে যেন অতীতের আলো ফেলেই বর্তমান দ্বিচারিতার জবাব দিচ্ছে ভারত। যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো আমেরিকা আজ ভারতের ওপর অভিযোগ তুললে, তার জবাব মিলবে ইতিহাসেই— এই বার্তা স্পষ্ট।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির জবাবে ইতিহাসের পাতা উল্টে কৌশলী বার্তা দিল ভারত। ১৯৭১-এ যারা অস্ত্র দিয়েছিল পাকিস্তানকে, তাদের কাছ থেকেই আজ শুনতে হচ্ছে ‘নৈতিকতা’র পাঠ। বর্তমান আর অতীত— দুই মেরুকেই এবার জবাব দিয়ে চলেছে দিল্লি।