ভারতীয় সেনার তৎপরতায় জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ জম্মু কাশ্মীরে

জম্মু ও কাশ্মীরের কুলগাম জেলার তাংমার্গ এলাকায় বুধবার জঙ্গি ও নিরাপত্তা বাহিনীর (indian army) মধ্যে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়। এই এনকাউন্টারে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার শাখা দ্য…

indian army defends terrorist attack

জম্মু ও কাশ্মীরের কুলগাম জেলার তাংমার্গ এলাকায় বুধবার জঙ্গি ও নিরাপত্তা বাহিনীর (indian army) মধ্যে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়। এই এনকাউন্টারে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-এর এক শীর্ষ কমান্ডার আটকা পড়েছে। এই ঘটনার একদিন আগে, মঙ্গলবার পাহালগামের বৈসরান মেডোতে টিআরএফ-এর দাবি করা এক ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যা সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর উপত্যকার সবচেয়ে মারাত্মক বেসামরিক হামলাগুলির একটি।

কুলগামে এনকাউন্টার ও বারামুল্লায় অনুপ্রবেশ ব্যর্থ (indian army)

কুলগামের তাংমার্গে চলমান এই গোলাগুলি দক্ষিণ কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরছে। এর আগে বুধবার সকালে, ভারতীয় সেনাবাহিনী (indian army) উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লার উরি সেক্টরে দুজন সন্ত্রাসীর অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে এবং তীব্র গোলাগুলির পর তাদের নিহত করে। এনকাউন্টারের পর নিরাপত্তা বাহিনী প্রচুর অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং পাকিস্তানি মুদ্রা উদ্ধার করে।

   

বুধের বাজারে রেকর্ড বৃদ্ধির পর সোনার দামে বড় পতন

পহেলগাঁওয়ে নৃশংস হামলা

মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁও থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বৈসরান মেডোতে পাঁচ থেকে ছয়জন জঙ্গি পর্যটকদের উপর গুলি চালায়। এই এলাকায় কেবল পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছানো যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসীরা আশপাশের পাইন বন থেকে বেরিয়ে পিকনিক করা, ঘোড়ায় চড়া বা খাবারের স্টলে খাওয়া মানুষদের উপর গুলি চালায়। নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি (সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেপাল), দুজন স্থানীয় এবং বাকিরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক ছিলেন। এই হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন।

টিআরএফ, যা ২০১৯ সালে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর গঠিত হয়েছিল, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন লস্কর-ই-তৈবার সাইফুল্লাহ কাসুরি, এবং টিআরএফ-এর আসিফ ফৌজি এই গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ভারত সরকারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

হামলার খবর পাওয়া মাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতে দিল্লি ফিরে আসেন। বুধবার তিনি তাঁর বাসভবনে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) বৈঠকের নেতৃত্ব দেন, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল (indian army) উপস্থিত ছিলেন।

অমিত শাহ মঙ্গলবার রাতে শ্রীনগরে পৌঁছে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ মহানির্দেশকের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা পর্যালোচনা করেন। তিনি পহেলগাঁওয়ের হামলাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের পরিবার ও সুরক্ষিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন। শাহ বলেন, “ভারত সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না। অপরাধীদের ছাড়া হবে না।”

রাজনৈতিক নিন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে “সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হামলা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।”

Advertisements

প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “পাহালগামে এই জঘন্য হামলার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের ছাড়া হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংকল্প অটুট।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার সহ বেশ কয়েকজন নেতা এই হামলার নিন্দা করেছেন।

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তিনজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী—আসিফ শেখ, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহার স্কেচ প্রকাশ করেছে, যারা মূসা, ইউনুস এবং আসিফ নামে কোডনেম ব্যবহার করেছিল। তাদের সম্পর্কে তথ্যের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তদন্তে যোগ দিয়েছে, এবং দক্ষিণ কাশ্মীরে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

টিআরএফ: সন্ত্রাসের নতুন মুখ

টিআরএফ ২০১৯ সালে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর গঠিত হয়েছিল এবং এটি লস্কর-ই-তৈবার একটি প্রক্সি সংগঠন হিসেবে কাজ করে। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। টিআরএফ সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা, সন্ত্রাসী নিয়োগ, অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত।

নিরাপত্তা জোরদার ও তদন্ত

হামলার পর জম্মু অঞ্চলকে হাই অ্যালার্টে (indian army) রাখা হয়েছে। দিল্লি, মুম্বই, জয়পুর এবং অমৃতসরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী পাহালগামের আশপাশের বনাঞ্চলে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা হামলার কয়েকদিন আগে কিশতওয়ার থেকে অনুপ্রবেশ করে এবং কোকরনাগ হয়ে বৈসরানে পৌঁছায়।

জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা, গুরুতর আহতদের জন্য ২ লাখ টাকা এবং আহতদের জন্য ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।

পাহালগাম হামলা এবং কুলগামে চলমান এনকাউন্টার (indian army) জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরেছে। ভারত সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা এই সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংকটের মোকাবিলা করছে।