নয়াদিল্লি: পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে মে মাসে চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর বড়সড় কাঠামোগত রদবদলের পথে হাঁটছে ভারতীয় সেনা। যুদ্ধ-কৌশলে প্রযুক্তির অগ্রাধিকার দিতে এবার প্রতিটি ব্যাটালিয়নে স্থায়ী ড্রোন ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গঠিত হচ্ছে হালকা কমান্ডো বাহিনী ‘ভৈরব’ ও সমন্বিত যুদ্ধবাহিনী ‘রুদ্র’ ব্রিগেড। উদ্দেশ্য একটাই, পরিচালনাগত সক্ষমতা ও যুদ্ধের সময় প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা বহুগুণে বাড়ানো (Indian Army drone units)।
প্রত্যেক ইউনিটে নির্ধারিত ড্রোন অপারেটর
যদিও সেনার বিভিন্ন শাখায় এর আগেও ইউএভি (Unmanned Aerial Vehicles) ব্যবহৃত হত, তবে তা ছিল ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ হিসেবে। এবার সেই চিত্র বদলাতে চলেছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা মাথায় রেখে প্রতিটি ব্যাটালিয়নে একটি স্থায়ী ও প্রশিক্ষিত ড্রোন ইউনিট থাকবে, যারা শুধুমাত্র ড্রোন অপারেশনের দায়িত্বে থাকবে।
প্রত্যেক ইনফ্যানট্রি ইউনিটে প্রায় ৭০ জন জওয়ানকে এই দায়িত্ব পালনের জন্য পুনঃনিয়োগ করা হবে। কোম্পানি ও প্লাটুন স্তরেই থাকবে নজরদারি ড্রোন। ফলে রিয়েল টাইম গোয়েন্দা তথ্য, শত্রুপক্ষের গতিবিধি ও লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত, সব ক্ষেত্রেই এই ড্রোন ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
আসছে ‘ভৈরব’ বাহিনী: হালকা ও নিখুঁত আঘাতের জন্য প্রশিক্ষিত কমান্ডো ইউনিট
সেনার সংস্কার প্রকল্পে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ‘ভৈরব ইউনিট’। প্রায় ২৫০ জন সদস্য বিশিষ্ট এই হালকা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রথম ৩০টি ইউনিট আগামী এক মাসের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে। প্রতিটি ইউনিট থাকবে নির্দিষ্ট কমান্ডের অধীনে এবং তাদের প্রশিক্ষণ হবে নির্দিষ্ট অপারেশনাল থিয়েটার অনুযায়ী—হোক তা সীমান্তে গেরিলা দমন বা পাহাড়ি অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী মোকাবিলা।
‘রুদ্র’ ব্রিগেড: এক ছাতার নিচে সমস্ত যুদ্ধশক্তি
সেনা সংস্কারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ সম্ভবত ‘রুদ্র’ ব্রিগেড গঠন। এই ব্রিগেডগুলি হবে একাধিক শাখার সমন্বয়ে গঠিত যুদ্ধগোষ্ঠী—যার মধ্যে থাকবে ইনফ্যানট্রি, কামানবাহিনী, বর্মযুক্ত ইউনিট, ইউএভি ইউনিট এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট। অর্থাৎ একটি ব্রিগেড হবে সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আলাদাভাবে অভিযানের জন্য প্রস্তুত।
সাধারণত, একটি কামান রেজিমেন্টে থাকে ৩টি ব্যাটারি—প্রত্যেকটিতে ৬টি কামান। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুটি ব্যাটারিতে যোগ হবে অতিরিক্ত কামান, আর তৃতীয় ব্যাটারি রূপান্তরিত হবে ড্রোন ইউনিটে, যাদের কাজ হবে পর্যবেক্ষণ ও আক্রমণ—দুটোই।
কারগিল বিজয় দিবসে সেনাপ্রধানের বার্তা
২৬ জুলাই, কারগিল বিজয় দিবস উপলক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এই নয়া রূপান্তরের রূপরেখা তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, “সামরিক লড়াইয়ের চরিত্র বদলেছে। আমাদের বাহিনীকেও সেই নতুন যুগের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।”