ভারতীয় বিমান বাহিনী (indian air force) শুক্রবার উত্তর প্রদেশের গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে একটি বিশেষ ফ্লাইপাস্ট এবং মহড়া পরিচালনা করেছে। এই মহড়ার অংশ হিসেবে, বিমান বাহিনী উত্তর প্রদেসের শাহজাহানপুরে নির্মাণাধীন গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি এয়ারস্ট্রিপে উড্ডয়ন ও অবতরণ মহড়া পরিচালনা করে।
এই মহড়ায় রাফাল, জাগুয়ার এবং মিরাজের মতো উন্নত যুদ্ধবিমান এবং পরিবহন বিমান ব্যবহার করে বিমান বাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি প্রদর্শিত হয়। এই মহড়ার উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধ বা জাতীয় জরুরি পরিস্থিতিতে গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের এই এয়ারস্ট্রিপকে বিকল্প রানওয়ে হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা যাচাই করা।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে (indian air force)
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি দেশের প্রথম এয়ারস্ট্রিপ (indian air force) হবে, যা দিন ও রাতে যুদ্ধবিমানের অবতরণ ও উড্ডয়ন সমর্থন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ হিসেবে কাজ করবে এবং বিমান বাহিনীর (indian air force) প্রশিক্ষণ ও মহড়ার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।” এই এয়ারস্ট্রিপটি গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ, যা মেরঠ থেকে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত ৫৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উত্তর প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি
এয়ারস্ট্রিপের উভয় পাশে প্রায় ২৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এয়ার শো এবং মহড়ার জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনী এয়ারস্ট্রিপের অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। উত্তর প্রদেশ এক্সপ্রেসওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ইউপিইআইডিএ) এবং বিমান বাহিনীর (indian air force) কর্মীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই মহড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই এয়ার শো দুটি পর্যায়ে পরিচালিত হবে—দিনের বেলা এবং রাতে—যাতে এয়ারস্ট্রিপের রাত্রিকালীন অবতরণ ক্ষমতা পরীক্ষা করা যায়। যুদ্ধবিমানগুলি মাত্র এক মিটার উচ্চতায় নিম্ন ফ্লাইপাস্ট পরিচালনা করবে, এরপর অবতরণ এবং উড্ডয়ন মহড়া সম্পন্ন করবে। এই ক্রমটি রাত ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করা হবে।
কৃষি উন্নয়নে এগিয়ে অরুণাচল, সিএইউ বোর্ডে দুই প্রতিনিধি
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে উত্তর প্রদেশ এবং সমগ্র ভারতের মধ্যে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, যা রাত্রিকালীন অবতরণ ক্ষমতা সহ এয়ারস্ট্রিপ প্রদান করছে। এই অগ্রগতি ভারতীয় বিমান বাহিনীর চব্বিশ ঘণ্টা অপারেশন পরিচালনার ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
এই এয়ারস্ট্রিপটি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বা জাতীয় জরুরি অবস্থায় বিমান বাহিনীর জন্য একটি বিকল্প রানওয়ে হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া, এটি বিমান বাহিনীর পাইলটদের প্রশিক্ষণ এবং মহড়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
সিভিল-মিলিটারি সিনার্জির নতুন যুগ
এই মহড়া (indian air force) ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মতো কৌশলগত অবকাঠামো ব্যবহার করে ভারত সিভিল-মিলিটারি সিনার্জির একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। এই ধরনের উদ্যোগ জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক কৌশলকে আরও উন্নত করবে। গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নয়, বরং জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মহড়ার বিস্তারিত পরিকল্পনা
মহড়ার সময়, রাফাল যুদ্ধবিমান, (indian air force) যা ভারতীয় বিমান বাহিনীর অত্যাধুনিক সম্পদগুলির মধ্যে একটি, এবং জাগুয়ার ও মিরাজের মতো বিমানগুলি উড্ডয়ন ও অবতরণ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। এই বিমানগুলি অত্যন্ত কম উচ্চতায় ফ্লাইপাস্ট পরিচালনা করে, যা বিমান বাহিনীর (indian air force) পাইলটদের দক্ষতা এবং এয়ারস্ট্রিপের গুণগত মান প্রদর্শন করে। রাত্রিকালীন মহড়ায় এয়ারস্ট্রিপের আলোক ব্যবস্থা এবং নেভিগেশন সুবিধাগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, যা এই ধরনের অপারেশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
শাহজাহানপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা এই মহড়া দেখতে উৎসাহী ছিলেন। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে, যাতে মহড়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে জাতীয় গর্বের অনুভূতি জাগিয়েছে, কারণ গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে তাদের অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও অবদান রাখছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই মহড়াকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (indian air force) শক্তি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অন্যান্য এক্সপ্রেসওয়েতে এয়ারস্ট্রিপ
এর আগে, ভারতের বিভিন্ন এক্সপ্রেসওয়েতে এয়ারস্ট্রিপ পরীক্ষা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে আগ্রা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে এবং ২০২১ সালে রাজস্থানের জালোর-বাড়মের জাতীয় মহাসড়কে বিমান বাহিনী মহড়া পরিচালনা করেছিল।
তবে, গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারস্ট্রিপটি তার রাত্রিকালীন অবতরণ ক্ষমতার কারণে অনন্য। এই বৈশিষ্ট্য এটিকে অন্যান্য এয়ারস্ট্রিপ থেকে আলাদা করে এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (indian air force) এই মহড়া জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যে একটি সফল সমন্বয়ের প্রতীক। এই এয়ারস্ট্রিপটি যুদ্ধ বা জরুরি পরিস্থিতিতে বিমান বাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
সিভিল এবং মিলিটারি প্রশাসনের এই যৌথ প্রচেষ্টা ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের এই অর্জন ভারতের অবকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।