বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি তৈরী করে ইতিহাস ভারতের

india-worlds-highest-airbase-nyoma-ladakh

লাদাখ: হিমালয়ের কোলে, যেখানে বাতাস এতটাই পাতলা যে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, সেখানেই ভারত এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপন করেছে। নিউমা বিমানঘাঁটি, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, এখন সম্পূর্ণ কার্যকর। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত বিমানঘাঁটি। চীন সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই ঘাঁটি ভারতের হিমালয় সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

Advertisements

রাফাল এবং সুখোই-৩০এমকেআই যুদ্ধবিমান এখান থেকে নির্বিঘ্নে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। এই ঘাঁটির উদ্বোধন কেবল প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং ভারতের কৌশলগত দৃঢ়তার প্রতীক।নিউমা বিমানঘাঁটির যাত্রা শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে। লাদাখের কঠিন ভূখণ্ড, অক্সিজেনের অভাব, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা এসবের মধ্যে এই ঘাঁটি নির্মাণ ছিল এক দুঃসাধ্য চ্যালেঞ্জ।

   

সোনার গয়না চুরির অভিযোগ, গ্রেফতার অভিনেত্রী

ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এই ঘাঁটির গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। নিউমা শুধু একটি বিমানঘাঁটি নয়, এটি ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।এই ঘাঁটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর অবস্থান।

চীনের সঙ্গে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এটি দ্রুত সামরিক সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বাড়িয়েছে। রাফাল যুদ্ধবিমান, যা ভারতের বিমানবাহিনীর মেরুদণ্ড, এখান থেকে অত্যন্ত কম সময়ে শত্রু অঞ্চলে পৌঁছাতে পারবে। সুখোই-৩০এমকেআই-এর মতো ভারী যুদ্ধবিমানও এই উচ্চতায় স্বাচ্ছন্দ্যে পরিচালিত হতে পারে।

Advertisements

এর ফলে ভারতের বিমানবাহিনী এখন হিমালয়ের আকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম।নিউমা বিমানঘাঁটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর পরিকাঠামো। ৩,০০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে, আধুনিক হ্যাঙ্গার, জ্বালানি সংরক্ষণাগার এবং রাডার ব্যবস্থা সবই এখানে রয়েছে। উচ্চ উচ্চতায় বিমান পরিচালনার জন্য বিশেষ প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। নিউমায় সেই প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।

পাইলটদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, বিমানের ইঞ্জিনের জন্য বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা এসবের মাধ্যমে এই ঘাঁটি সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ।এই ঘাঁটির উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারত চীনের সামরিক অগ্রগতির জবাব দিয়েছে। চীন তিব্বতে একাধিক বিমানঘাঁটি নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে কয়েকটি উচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত। কিন্তু নিউমা এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি হিসেবে ভারতকে এগিয়ে রেখেছে।

এটি কেবল সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেনি, বরং সীমান্তে মনোবলও বাড়িয়েছে।স্থানীয়দের জন্যও এই ঘাঁটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। লাদাখের অর্থনীতি পর্যটন ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। নিউমা বিমানঘাঁটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। স্থানীয় যুবকরা বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন। তবে পরিবেশের ওপর প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

হিমালয়ের সূক্ষ্ম বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য সরকার পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।নিউমা বিমানঘাঁটি ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি প্রমাণ করে যে ভারত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। হিমালয়ের কঠিন পরিবেশে এই ঘাঁটি নির্মাণ ভারতীয় প্রকৌশলী ও সেনাদের দক্ষতার প্রতীক। এটি কেবল একটি বিমানঘাঁটি নয়, ভারতের অটল সংকল্পের প্রতিচ্ছবি।