মার্কিন অনুমোদন মিলল, ভারতের অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে আসছে নয়া ক্ষেপণাস্ত্র

India, US Ink Multicore Defense Deal for High-Tech Missile System

‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর সীমান্তের জটিল পরিস্থিতি ও শত্রুপক্ষের সম্ভাব্য আগ্রাসন মোকাবিলায় ভারতের যে জরুরি প্রতিরক্ষা চাহিদা তৈরি হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত গতিতে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগেরই বড় ধাপে অবশেষে সায় দিল আমেরিকা। মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কাছে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র (Indian Missile Syestem) ও গোলাবারুদ বিক্রির। মোট চুক্তির আনুমানিক মূল্য ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার—যা ভারতীয় মুদ্রায় ৮১৫ কোটিরও বেশি।

Advertisements

সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক ভারত-পাক সংঘর্ষের সময় যে পরিমাণ গোলাবারুদ ব্যবহার হয়েছিল, তা পুনরায় সংগ্রহ করাই ছিল ভারতের প্রধান লক্ষ্যগুলির একটি। পাশাপাশি সীমান্তে সেনা মোতায়েনের মান বজায় রাখা, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি আরও জোরদার করা এবং শত্রুপক্ষের ট্যাংক আক্রমণ প্রতিহত করার সামর্থ্য বাড়ানোও ছিল অপরিহার্য। সেই কারণেই আমেরিকার থেকে জাভেলিন (Javelin) অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইলসহ বিভিন্ন নির্ভুল অস্ত্রের অনুরোধ জানায় ভারত। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুমোদন পাওয়ায় এখন সেই অস্ত্রভাণ্ডার ভারতের হাতে পৌঁছনোর পথ খুলে গেল।

   

জাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ট্যাংক-বিধ্বংসী অস্ত্রব্যবস্থা। ‘ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট’ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই মিসাইল লক্ষ্যবস্তুকে লক করে নিলে নিজস্ব ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মাধ্যমে লক্ষ্যভেদ করে। এটি ট্যাংক, সশস্ত্র যান, কংক্রিট বাংকার বা অন্যান্য দূর্গত কাঠামো ধ্বংস করতে অত্যন্ত কার্যকর। ভারতীয় সেনার মতে, দুর্গম পাহাড়ি সীমান্তে বা রাতের অন্ধকারেও এর কার্যকারিতা প্রায় অনস্বীকার্য। লাদাখ অঞ্চলে চীনা সেনার সঙ্গে উত্তেজনার সময় জাভেলিনের মতো ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ভারত যে সরঞ্জামগুলি কেনার অনুরোধ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে—১০০টি এফজিএম-১৪৮ জাভেলিন রাউন্ড, একটি জাভেলিন এফজিএম-১৪৮ ক্ষেপণাস্ত্র, ২৫টি জাভেলিন লাইটওয়েট কমান্ড লঞ্চ ইউনিট (LwCLU)। কমান্ড লঞ্চ ইউনিট হচ্ছে সেই ব্যবস্থা যার মাধ্যমে লক্ষ্য চিহ্নিত করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। উন্নত ইমেজিং প্রযুক্তির কারণে এই ইউনিট দিনে ও রাতে, সব পরিস্থিতিতেই কাজ করতে সক্ষম। এর ফলে অভিযানের সময় আরও তথ্যসমৃদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।এ ছাড়াও ক্ষেপণাস্ত্র সিমুলেশন রাউন্ড, ব্যাটারি কুল্যান্ট ইউনিট, ইন্টারেক্টিভ ইলেকট্রনিক টেকনিক্যাল ম্যানুয়াল, প্রশিক্ষণ সহায়তা, যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তিগত পরিষেবা—সবই এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ শুধু অস্ত্রই নয়, সঙ্গে জাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণও পাবে ভারত। এতে সেনার হাতে উন্নত অস্ত্র বেশি দিন ধরে চলবে এবং এর কার্যকারিতা বজায় থাকবে।

Advertisements

জাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় ভারতের আনুমানিক খরচ হবে ৪৫.৭ মিলিয়ন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৪০৫ কোটির বেশি। বাকি অর্থ ব্যয় হবে কামানের উন্নত গোলা, সিমুলেশন সিস্টেম এবং অন্যান্য সহায়ক সরঞ্জামের পেছনে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিনিয়োগ ভারতীয় সেনার আঘাত করার ক্ষমতা যেমন বাড়াবে, তেমনই সীমান্তে শত্রুপক্ষের ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ব্যবহারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে। বিশেষত পশ্চিম ফ্রন্টে পাকিস্তানের এবং উত্তরে চীনের ট্যাংক মোতায়েন কৌশল মোকাবিলায় জাভেলিন অত্যন্ত কার্যকর হবে।

ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। সমুদ্র নিরাপত্তা, সাইবার প্রতিরক্ষা এবং উন্নত সামরিক প্রযুক্তি বিনিময়—সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের সহযোগিতা এখন নতুন উচ্চতায়। সাম্প্রতিক এই অনুমোদন সেই সম্পর্ককে আরও গভীর করল। প্রতিরক্ষা মহলের মতে, ভবিষ্যতে ভারত আরও আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম আমেরিকার থেকে পেতে পারে।