ভারত ও যুক্তরাজ্যের (India-UK FTA) মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে চলেছে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA), যা ভারতের কৃষিক্ষেত্র এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিচ্ছে। এই চুক্তির ফলে বাসমতী চাল, তুলা, চিনাবাদাম, বিভিন্ন ফল ও সবজি, পেঁয়াজ, আচার, মশলা, চা ও কফি ইত্যাদি পণ্যে যুক্তরাজ্যে রপ্তানির সময় কোনো শুল্ক দিতে হবে না।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ড রাজ্য বাসমতী চাল ও ফল-সবজি উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়। তুলা উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাষ হয়, আর হিমাচল প্রদেশের অর্থনীতির বড় অংশই ফল চাষের উপর নির্ভরশীল। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে এই রাজ্যগুলির কৃষকরা উল্লেখযোগ্য লাভবান হবেন।
তবে, এই চুক্তিতে দুধ, আপেল, ওটস এবং ভোজ্য তেল আমদানির ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়নি, যার ফলে হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরের আপেল চাষিরা সুরক্ষা পাবেন। এই দুই রাজ্যের কৃষক ও রাজনৈতিক নেতারা আপেল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় না দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
চুক্তির অধীনে, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পণ্যের মধ্যে যথাক্রমে ১৪.৮% ও ১০.৬% পণ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। মোট ৯৫%-এরও বেশি ‘ট্যারিফ লাইন’-এ শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ থাকছে। এতে করে আগামী তিন বছরে ভারতের কৃষি রপ্তানি ২০%-এর বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এছাড়া, গোয়ার ‘ফেনি’, নাসিকের আঞ্চলিক ওয়াইন এবং কেরালার ‘তাড়ি’-র মতো ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পানীয় পাবে Geographical Indication (GI) স্বীকৃতি ও ইউকের বিলাসবহুল হোটেল ও বিপণিতে স্থান।
ফিশারি ক্ষেত্রেও বড়সড় লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, কেরালা ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি ইউকের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের সামুদ্রিক খাদ্য বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে। বর্তমানে যে সকল সামুদ্রিক খাদ্য যেমন চিংড়ি, টুনা, মাছের খাবার ইত্যাদি ৪.২% থেকে ৮.৫% হারে শুল্ক দিয়ে রপ্তানি হয়, সেগুলি এখন শুল্কমুক্ত হবে।
চা, কফি ও মশলার ক্ষেত্রেও ভারত লাভবান হবে। ইউকে ভারতের কফির ১.৭%, চা-র ৫.৬% এবং মশলার ২.৯% আমদানি করে। এখন থেকে তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এফটিএ অনুযায়ী, ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাত — যেখান থেকে বর্তমানে বিশ্বে $14.07 বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয় — তা ইউকের $50.68 বিলিয়ন ডলারের আমদানি বাজারে প্রবেশ করে বড় সুযোগ পাবে। ভারতীয় পণ্য এখন পর্যন্ত মাত্র $309.5 মিলিয়ন মূল্যের রপ্তানি করে ইউকে-তে।
এই চুক্তি কার্যকর হলে ভারতীয় কৃষকরা যুক্তরাজ্যের উচ্চমূল্যের বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে, এবং কৃষিপণ্যের ব্র্যান্ডেড রপ্তানি ও মূল্য সংযোজিত পণ্যের প্রচারের এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দেশের কৃষক, কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য এক যুগান্তকারী সুযোগ। রপ্তানি বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের উচ্চমূল্য প্রাপ্তি এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।