ভারতের পরিচ্ছন্ন শক্তি খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী শক্তি ল্যান্ডস্কেপে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে (Clean Energy)। এক সময়ের দূষণমুক্ত শক্তির সুপারপাওয়ার আমেরিকা পিছিয়ে পড়ছে, আর ভারত দ্রুতগতিতে এই ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট (GW) অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে চলেছে, যা ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সমতুল্য।
এই অগ্রগতি ভারতকে দূষণমুক্ত শক্তির সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের আশার বাতিঘর হয়ে উঠছে।২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ভারত ২২ গিগাওয়াট বায়ু এবং সৌরশক্তি গ্রিডে সংযুক্ত করেছে, যা ২০২২ এবং ২০২৩ সালের মন্দার পর একটি উল্লেখযোগ্য পুনরুত্থান।
এই হার অব্যাহত থাকলে, ভারত এ বছর আমেরিকার প্রত্যাশিত ৪০ গিগাওয়াট উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যাবে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের দূষণমুক্ত শক্তি উৎপাদন ৬২ গিগাওয়াটে পৌঁছাবে। এই অগ্রগতি ভারতকে ২০২৬ সালের মধ্যে নিজস্ব কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পথে নিয়ে যাবে, যা বিশ্বকে নেট-জিরো নিঃসরণের দিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভারতের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া গত ডিসেম্বর থেকে নীতিগত সুদের হার এক শতাংশ কমিয়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে এসেছে, যা পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রকল্পের জন্য ঋণের খরচ কমিয়েছে। এছাড়া, বায়ু এবং সৌর প্রকল্পের জন্য ট্রান্সমিশন চার্জে ছাড়ের মেয়াদ গত মাসে শেষ হওয়ায় বিকাশকারীরা তাড়াহুড়ো করে প্রকল্প সম্পন্ন করেছে।
সরকারের লক্ষ্যভিত্তিক নীতি, যেমন পিএম-কুসুম, পিএম সূর্য ঘর: মুফত বিজলি যোজনা, সোলার পার্ক, উইন্ড-সোলার হাইব্রিড পলিসি এবং বায়োএনার্জি নীতি, এই অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০২৫ সালে ভারত তার মোট বিদ্যুৎ ক্ষমতার ৫০ শতাংশ অ-জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে অর্জন করেছে, যা ২০৩০ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ বছর আগে অর্জিত হয়েছে।
অন্যদিকে, আমেরিকা, ২০১১ সাল পর্যন্ত দূষণমুক্ত শক্তিতে বিশ্ব নেতৃত্ব দিয়েছিল, এখন পিছিয়ে পড়ছে। গত বছর চিন আমেরিকার তুলনায় আট গুণ বেশি নবায়নযোগ্য শক্তি সংযোজন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা তেল এবং গ্যাস রপ্তানির উপর জোর দিচ্ছে, যা জলবায়ু লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভারতের সৌর প্যানেল উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ৯১ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা দেশীয় চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত ক্ষমতা আমেরিকার বাজারে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করছে, যদিও আমেরিকান প্রতিযোগীরা ভারতীয় পণ্যের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ব্যবস্থা চাওয়ার চেষ্টা করছে।
ভারতের দূষণমুক্ত শক্তি উদ্যোগ কেবল পরিবেশগত নয়, অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত পরিচ্ছন্ন হাইড্রোজেন, এনার্জি স্টোরেজ এবং কার্বন ক্যাপচারে বছরে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাটারি স্টোরেজ ক্ষমতা ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে ৪৭ গিগাওয়াট/২৩৬ গিগাওয়াট-ঘণ্টায় পৌঁছাবে, যা বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাটারি স্টোরেজ সুবিধার ৮০ গুণ এবং ভারতের বর্তমান ক্ষমতার ১১০ গুণ।
‘যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন ভূমিকা নেই’ লোকসভায় দাবি জয়শঙ্করের
এই অগ্রগতি ভারতকে কেবল পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। ইউএস এনার্জি সেক্রেটারি জেনিফার গ্রানহোলম বলেছেন, “বিশ্বের শক্তির ভবিষ্যৎ অনেকাংশে ভারতের শক্তির ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করবে।” ভারতের এই পথচলা অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ হয়ে উঠছে, যারা পরিবেশের ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জন করতে চায়।