সফলভাবে লং-রেঞ্জ গ্লাইড বোমা গৌরব টেস্ট করল ডিআরডিও

ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) সুখোই বিমান থেকে দীর্ঘ-পাল্লার গ্লাইড বোমা ‘গৌরব’-এর (Glide Bomb Gaurav) সফল উৎক্ষেপণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ‘গৌরব’ একটি ১,০০০…

Long-Range Glide Bomb ‘Gaurav’ from Sukhoi

ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) সুখোই বিমান থেকে দীর্ঘ-পাল্লার গ্লাইড বোমা ‘গৌরব’-এর (Glide Bomb Gaurav) সফল উৎক্ষেপণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ‘গৌরব’ একটি ১,০০০ কেজি ওজনের গ্লাইড বোমা, যা সম্পূর্ণভাবে ডিআরডিও-র দ্বারা দেশীয়ভাবে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। এই পরীক্ষাগুলি ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ)-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের প্রবর্তনের পথ প্রশস্ত করছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত এই পরীক্ষাগুলিতে ‘গৌরব’ প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্য ভারতের স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘গৌরব’-এর সফল পরীক্ষার জন্য ডিআরডিও, ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প অংশীদারদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “এই দীর্ঘ-পাল্লার গ্লাইড বোমার উন্নয়ন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে।” তিনি আরও জানান যে, এই অস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, “ডিআরডিও ৮ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সু-৩০ এমকেআই বিমান থেকে দীর্ঘ-পাল্লার গ্লাইড বোমা ‘গৌরব’-এর উৎক্ষেপণ পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। পরীক্ষার সময় এই অস্ত্রটি বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র কনফিগারেশনে একাধিক স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়েছিল এবং একটি দ্বীপে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।” এই পরীক্ষাগুলি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে এই অস্ত্রের অন্তর্ভুক্তির পথ সুগম করছে।

‘গৌরব’ ডিআরডিও-র হায়দ্রাবাদের রিসার্চ সেন্টার ইমারত (আরসিআই) এবং আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (এআরডিই) দ্বারা দেশীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই গ্লাইড বোমাটি একটি অত্যাধুনিক হাইব্রিড নেভিগেশন সিস্টেমে সজ্জিত, যা ইনারশিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (আইএনএস) এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস)-এর সমন্বয়ে কাজ করে। এই প্রযুক্তি বোমাটিকে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত করার ক্ষমতা প্রদান করে। উইংসযুক্ত এই বোমাটি উচ্চ উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করা হলে এটি প্রায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে লক্ষ্যে আঘাত করতে সক্ষম।

পরীক্ষার সময় ডিআরডিও এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং এই পরীক্ষার প্রতিটি দিক পর্যালোচনা করেছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই সিস্টেমটি উন্নয়ন-সহ-উৎপাদন অংশীদারদের সমর্থনে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অদানি ডিফেন্স সিস্টেমস অ্যান্ড টেকনোলজিস, ভারত ফোর্জ এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই)।” এই প্রকল্পে বেসরকারি খাতের সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরে।

এছাড়াও, সেন্টার ফর মিলিটারি এয়ারওয়ার্থিনেস অ্যান্ড সার্টিফিকেশন এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ অ্যারোনটিক্যাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এই প্রকল্পে সার্টিফিকেশন এবং গুণগত মান নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই সংস্থাগুলির প্রচেষ্টা নিশ্চিত করেছে যে ‘গৌরব’ আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য।

Advertisements

‘গৌরব’ গ্লাইড বোমার বিশেষত্ব হল এর স্ট্যান্ড-অফ ক্ষমতা, যা বিমানকে শত্রুপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিসরের বাইরে থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম করে। এটি বিমান এবং পাইলটের নিরাপত্তা বাড়ায় এবং একই সঙ্গে উচ্চ-মূল্যবান লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। এই বোমাটি বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র কনফিগারেশনে ব্যবহার করা যায়, যেমন উচ্চ-বিস্ফোরক বা বাঙ্কার-ধ্বংসকারী ওয়ারহেড, যা এটিকে বহুমুখী করে তোলে।

এই সাফল্য ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ। বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই ধরনের উন্নত অস্ত্র তৈরি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। ‘গৌরব’-এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়েছিল, এবং এই সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলি এর কার্যকারিতা এবং নির্ভরযোগ্যতা আরও প্রমাণ করেছে।

এই পরীক্ষার সাফল্য শুধুমাত্র ডিআরডিও এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য নয়, বরং সমগ্র দেশের জন্য গর্বের বিষয়। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। ‘গৌরব’-এর ভারতীয় বিমান বাহিনীতে প্রবর্তন শুধুমাত্র দেশের আকাশসীমার নিরাপত্তা বাড়াবে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য আরও উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।

এই অর্জন ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে বেসরকারি খাতের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণকেও তুলে ধরে। অদানি ডিফেন্স এবং ভারত ফোর্জের মতো সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা প্রমাণ করে যে, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। ‘গৌরব’-এর সাফল্য ভারতকে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উৎপাদনকারী দেশগুলির তালিকায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।