ভারত-চিন সম্পর্কের সংবেদনশীল সময়ের মধ্যেই নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হলো অরুণাচল প্রদেশের এক ভারতীয় (India) মহিলা যাত্রীকে চিনে আটকে রাখাকে কেন্দ্র করে। সরকারিভাবে জানা গেছে, ওই মহিলা বিমানযাত্রার সময় ট্রানজিটে থাকা অবস্থায় চিনা কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করে। ঘটনাটি সামনে আসতেই ভারত সরকার একই দিনে বেজিং ও নয়াদিল্লিতে চিনের সামনে কড়া ডিমার্শ দাখিল করে। পাশাপাশি সাংহাইয়ে অবস্থিত ভারতীয় কনস্যুলেট দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এবং যাত্রীকে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করে।
ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে—এই আটক সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন, এবং অরুণাচল প্রদেশ সম্পর্কে চিনের অবস্থান ভারত গ্রহণ করবে না। ভারতের সরকারি বিবৃতিতে জোরালোভাবে বলা হয়েছে,
“Arunachal Pradesh is unequivocally Indian territory. এর বাসিন্দারা ভারতীয় পাসপোর্টে যেকোনো দেশে ভ্রমণের পূর্ণ অধিকার রাখেন।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল—অরুণাচলকে নিয়ে বেজিংয়ের রাজনৈতিক অবস্থান যতই বিতর্কিত হোক, ভারতের দৃষ্টিতে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ বা দ্ব্যর্থতা নেই।
🔶 চিনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল আইন লঙ্ঘন: ভারতের অভিযোগ
ভারত উল্লেখ করেছে, যেভাবে ওই যাত্রীকে আটক করা হয়, তা Chicago Convention এবং Montreal Convention—দুই আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল চুক্তির পরিপন্থী।
এই কনভেনশনগুলির মূল বক্তব্য—
-
বৈধ পাসপোর্টধারী কোনো যাত্রীকে বিনা যুক্তিতে আটক করা যাবে না
-
ট্রানজিট যাত্রীদের সুরক্ষা ও বৈধতা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট দেশের দায়িত্ব
-
বিমানে ওঠা ও নেমে যাওয়ার সময় রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকারের পরিপন্থী না হওয়া
ভারতের দাবি, চিন এই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ভঙ্গ করেছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ডিমার্শের মাধ্যমে ভারত চিনকে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে—
যে ধরনের একতরফা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা শুধু আইনি নয়, কূটনৈতিকভাবেও অগ্রহণযোগ্য।
🔶 দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ চলাকালেই ঘটল ঘটনা
লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার বছরগুলোর পর ভারত ও চিন ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পদক্ষেপ নিচ্ছিল।
-
কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক
-
ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলের সংলাপ
-
ট্রেড ও পিপল-টু-পিপল যোগাযোগের সীমিত পুনরুদ্ধার
এই সবকিছু সত্ত্বেও, ভারত মনে করছে—চিনের এমন আচরণ “unnecessarily complicates matters”।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের ভাষায়—
“At a time when both sides are trying to restore normalcy, such conduct by China creates needless obstacles.”
অর্থাৎ, সীমান্ত–সংক্রান্ত উত্তেজনার সমাধানের প্রচেষ্টায় এ ধরনের ঘটনা কেবলই নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
🔶 অরুণাচলকে কেন্দ্র করে চিনের অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত
চিন বহু বছর ধরে দাবি করে আসছে যে অরুণাচল প্রদেশ তাদের “South Tibet”। ভারত এ দাবি সর্বদা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের অবস্থান—
-
অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ
-
যে কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের এই অবস্থান অপরিবর্তিত
-
সেই রাজ্যের বাসিন্দারা ভারতের নাগরিক এবং ভারতীয় পাসপোর্টে বৈধভাবে ভ্রমণের পূর্ণ অধিকার রাখেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে অরুণাচলের নাগরিকদের প্রতি এমন আচরণ করে রাজনৈতিক অবস্থান জাহির করতে চায়।
কিন্তু ভারতের স্পষ্ট বার্তা—যে কোনো ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হলে তার বিরুদ্ধে কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
🔶 ভারতীয় কনস্যুলেটের দ্রুত হস্তক্ষেপ
সাংহাইয়ে অবস্থিত ভারতীয় কনস্যুলেট খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হস্তক্ষেপ করে।
তারা—
-
যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে
-
আইনগত সহায়তা দেয়
-
চিনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আটক শিথিল করার প্রক্রিয়া শুরু করে
ভারতের মতে, এই পুরো ঘটনা অপ্রয়োজনীয়, অসঙ্গত এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত।
🔶 সামগ্রিক মূল্যায়ন
এই ঘটনা আবারও স্পষ্ট করল—ভারত-চিন সম্পর্ক এখনও জটিলতা ও অবিশ্বাসের স্তর বহন করছে।
যদিও দু’দেশই প্রকাশ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা দেখাচ্ছে, তবু মাটির নীচে চাপা থাকা রাজনৈতিক উত্তেজনা মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনায় সামনে আসে।
ভারতের বার্তা এইবার অত্যন্ত দৃঢ়—
-
অরুণাচল ভারতের অংশ
-
অরুণাচলের নাগরিকদের আটক করা যাবে না
-
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কোনো দেশকে যাত্রী আটক করার অধিকার নেই
-
সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সময়ে চিনের একতরফা পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে ঠেলে দিতে পারে
এই কূটনৈতিক টানাপোড়েন ভবিষ্যতে ভারত-চিন বৈঠক, সীমান্ত আলোচনায় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরবর্তী কূটনৈতিক যোগাযোগই ঠিক করবে—এই ঘটনা ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা ছিল, নাকি আরও বড় সংঘাতের সূচনা।
